প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর খোলা চিঠি

বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারেরও। আলাদা আলাদা অনুমোদন মানে আলাদা তদবির ব্যয়।
PM_Zaforullah.jpg
ছবি: সংগৃহীত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এই খোলা চিঠি লিখছি।

বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারেরও। আলাদা আলাদা অনুমোদন মানে আলাদা তদবির ব্যয়।

হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন নিয়মাবলী করেছে, যা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।

লাইসেন্স ফি

প্রতিটি হাসপাতালের সঙ্গে আলাদা আলাদা ল্যাবরেটরি, আলাদা রোগ নির্ণায়ক (X-ray, USG) বিভাগ, দন্ত বিভাগ, আলাদা রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের লাইসেন্স নিতে হয়, যার বর্ধিত হার তুলে ধরছি।

হাসপাতালের জন্য পূর্বে প্রচলিত নির্ধারিত ফি ছিল ৫ হাজার টাকা, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর বর্ধিত লাইসেন্স ফি হয়েছে ২ লাখ টাকা, অর্থাৎ ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দন্ত বিভাগের জন্য আগের ফি ছিল ১ হাজার টাকা, ২০১৮ সাল থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা, অর্থাৎ ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ল্যাবরেটরি, রোগ নির্ণায়ক বিভাগ ও রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের জন্য আগের ফি ছিল ১ হাজার টাকা করে। ২০১৮ সাল থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, অর্থাৎ ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখ্য, কেবল লাইসেন্স ফি জমা দিলেই হবে না, পরিবেশ অধিদপ্তর ও অগ্নিনির্বাপক বিভাগে অনেক টাকা খরচ করে তাদের নিয়ম মেনে উভয় বিভাগের অনুমোদনপত্র সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। অনলাইনে সামান্য হেরফের থাকলে আবেদনপত্র এগুবে না। তবে অনুমোদন না থাকলেও কেউ বিরক্ত করবে না, দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ চালু রাখতে হবে। নিয়মিত মাসোহারা দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে হবে। দুর্নীতির নিয়মের সিঁড়ি মেপে চলতে হবে।

ভবিষ্যতে হয়তো হাসপাতালের বিভাগের সংখ্যা আরও বাড়বে। যেমন: বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলজি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ইমিউনলজি, হিস্টোপ্যাথলজি ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে কেবল হাসপাতালের অনুমোদন থাকলে চলবে না, হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা অনুমোদন নিতে হবে। সরকারি ফি কত বেড়েছে লক্ষ করুন। হয়রানি ও দুর্নীতি একত্রে চলাফেরা করে। একটি উদাহরণ দিই, রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের (Blood Transfusion Department) জন্য অনুমোদন চাইতে হলে এই বিভাগ পরিচালনার জন্য রক্ত পরিসঞ্চালন সংক্রান্ত দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পাস একজন চিকিৎসক থাকতে হবে। বাংলাদেশে ২০০০ এর বেশি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র আছে। এ বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত চিকিৎসক আছেন ৮০ এর অনধিক। এ বিভাগে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অন্ততপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক অবসর জীবনযাপন করছেন। ৬০ বছরের অধিক বয়সী চিকিৎসকদের চাকরির বিধান নেই। চিকিৎসকরা তো বিচারপতি বা সিনিয়র সচিব নন।

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ চিকিৎসকদের জন্য আর্থিকভাবে আকর্ষণীয় নয় বলে, তরুণ চিকিৎসকরা দুই বছর ব্যয় করে এই উচ্চ বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী নন। রক্ত পরিসঞ্চালনে তিন মাসের প্রশিক্ষণ অধ্যয়নই যথেষ্ট। বিগত ২০ বছর যাবত আমি বলে আসছি এমবিবিএস চিকিৎসকদের জন্য তিন মাস মেয়াদি রক্ত পরিসঞ্চালনে সার্টিফিকেট কোর্স এবং ছয় মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স প্রবর্তন করুন। তিন মাসের অতিরিক্ত এই বিভাগে শিক্ষা গ্রহণ বা অধ্যয়ন সময়ের অপচয় মাত্র। সরকার বিষয়টি গ্রহণ করেনি। ফলে এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা সহজ হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র বন্ধ হয়নি, তবে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সতর্কপত্রের সংখ্যা বেড়েছে।

ল্যাবরেটরি ও রোগ নির্ণায়ক সেন্টারসহ হাসপাতাল রেজিস্ট্রেশন ফি বছরে ১ লাখ টাকার বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। মিউনিসিপাল হোল্ডিং ট্যাক্সও আরেক ধরনের হয়রানি। হাসপাতাল অনুমোদনের নিয়মাবলী সহজ হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেবল নিশ্চিত করবে প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসার গুণগত মান- অর্থাৎ ন্যূনতম ইমার্জেন্সি চিকিৎসকের উপস্থিতি এবং চিকিৎসকদের নিয়মিত ব্যবহারের জন্য কয়েকটি অতি প্রয়োজনীয় সচল মেডিকেল যন্ত্রপাতির নিশ্চয়তা, যেমন- ফ্লো-মিটারসহ একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার, রক্তে অক্সিজেন মিশ্রণ নির্ধারক পালস অক্সিমিটার, অ্যাম্বু (AMBU) ব্যাগ, নেবুলাইজার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ও বিভিন্ন পরীক্ষার নির্ণায়ক ডায়াগনস্টিক, ওজন নির্ণায়ক একাধিক মেশিন, একটি ইসিজি ও একটি ডিফিব্রিলেটর মেশিন, মৌলিক রোগ নির্ণায়ক এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাবরেটরি এবং রক্ত পরিসঞ্চালন সুবিধা।

সরকারি অযৌক্তিক অপ্রয়োজনীয় নিয়মাবলীর কারণে ‘রিজেন্ট সাহেদ’ তৈরি হয়েছে ঢাকায়। প্রতিটি শহরে ও উপজেলায় বহু রিজেন্ট সাহেদ, সাহাবউদ্দিন ও ডা. সাবরিনা তৈরি হচ্ছে এবং আরও হবে। গত বছর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ডিপ্লোমা নার্সের নিয়োগ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করেছে ৫ লাখ টাকার বেশি। সরকারি হাসপাতাল নীতিমালা পূরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন ৫০ জন নার্স। ১০ জন নার্সও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরির জন্য আবেদন করেনি। সরকারি হাসপাতালে সেবা না দিয়ে বেতন পাওয়ার সুবিধা আছে। আপনি বলে দিন, আমাদের কী করণীয়? র‍্যাব দ্বারা আটক হওয়ার আগে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কি বন্ধ করে দেবো? বিগত কয়েক বছরে কয়েকটি সৌজন্যমূলক সতর্কবাণী আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। অনুগ্রহ করে এমন নিয়ম করুন, যা সহজে পালন করে জনসাধারণের কল্যাণ করা যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসৎ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা মালিকরা হয়রানির সম্মুখীন হবেন না, তা নিশ্চিত করুন।

প্লাজমা জীবন রক্ষাকারী

করোনামুক্ত রোগীর রক্ত থেকে আলাদাভাবে প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনা রোগীকে প্লাজমা ট্রান্সফিউজ করালে প্রায় নতুন জীবন সঞ্চার হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তিন বার প্লাজমা নিয়ে আমার করোনা থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম সহজ হয়েছে। কিন্তু যে সাধারণ দরিদ্র রোগীর জীবন রক্ষার্থে প্লাজমার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, সেই দরিদ্র রোগীই প্লাজমা সুবিধা থেকে বেশি বঞ্চিত। কারণ অধিকাংশ ল্যাবরেটরির প্লাজমা তৈরির অনুমোদন নেই। এই নিয়মের অজুহাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য প্রতিবার ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা চার্জ ধরা হয় এবং অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে প্লাজমা প্রাপ্তির সুবিধা নেই। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ৫০০০ টাকায় রোগীকে আন্তর্জাতিক মানের প্লাজমা সরবরাহ করতে চায়, কিন্তু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুমোদন নেই। প্লাজমা উৎপাদনের জন্য রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে নেই উচ্চ ডিগ্রিধারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। অদূর ভবিষ্যতে ভারত, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে প্লাজমা আমদানি করা হবে ওষুধ হিসাবে, তবে প্লাজমা উৎপাদন করা যাবে না। গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনার অ্যান্টিবডি নির্ণায়ক কিটের (Rapid Dot Blot) অনুমোদন আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, নিয়মের বেড়াজালে পড়ে।

সাধারণ বিষয়কে কঠিন অংকে পরিণত করা কি যুক্তিসঙ্গত?

২১ জুলাই, ২০২০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোর তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে যে, নিজ বাড়িতে আলাদা রুমে রেখে অধিকাংশ করোনা রোগী চিকিৎসা করে সুস্থ করা যায়। বসুন্ধরার কোভিড-১৯ ২০০০ শয্যার আইসোলেশন হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে মাত্র ১৭ জন (১ শতাংশের অনধিক), চট্টগ্রাম রেলওয়ে ও গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ছিল মাত্র একজন করে।

রোগীর জন্য দুর্ভিক্ষ ও রোগীর জন্য হাহাকার পূর্বে কখনো বাংলাদেশে দেখা যায়নি।

বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন প্রতারিত হওয়ার সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। ধানমন্ডির আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ দিনের জন্য করোনা রোগীকে চিকিৎসা বাবদ পরিশোধ করতে হয় তিন লাখ টাকার বেশি। রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা, সেবা প্রদানকারীদের বেতন, অক্সিজেন ও ওষুধের দাম বাবদ ব্যয় কোনো ক্রমে দিনে ৫০০০ টাকার বেশি বিল করার যৌক্তিকতা নেই, কেবল মাত্র প্রতারণা ছাড়া। সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক-নার্সের হোটেলে থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতিদিন খরচ হয় দুই হাজার টাকার কিছু বেশি এবং চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের কাজ করতে হয় দুই সপ্তাহে মাত্র দুই দিন। এটা কোনো ভালো ব্যবস্থাপনার নজির হতে পারে না।

সুলভে যৌক্তিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সবার, কিন্তু নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার সরকারের। দ্রুত অগ্রসরমান করোনা ধ্বংসযজ্ঞ রোধে আপনার কামনা দারিদ্র্যতামুক্ত সুস্থ বাংলাদেশ। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ছাড়া দেশে দারিদ্র্যতার অবসান হবে না। ২০২০-২১ বাজেট আলোচনায় এই উপলব্ধির প্রমাণ নেই। প্রথমতঃ বড় শহরগুলোতে সব নাগরিককে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স-এর সঙ্গে নিবন্ধনকরণ এবং এক একটি এলাকাকে একটি বড় সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত করে রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন শুরু করতে হবে। রাজধানী ঢাকা দিয়ে তা শুরু হতে পারেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার টাকার বালিশ-পর্দার সিন্ডিকেটকে একটি ভালো কাজ করার, প্রজেক্ট করার নির্দেশ দিন।

অন্যূন ৫০ হাজার লোক সংখ্যার ইউনিয়নে দুই জন সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত না করতে পারলে সার্বজনীন চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করা আকাশকুসুম চিন্তা হবে মাত্র।

বাংলাদেশের ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৬ ফুট উঁচু নিরাপত্তা বেষ্টনী, গভীর নলকূপ ও ইলেক্ট্রিসিটি সুবিধাসহ চিকিৎসকদের বাসস্থান নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় মৌলিক যন্ত্রপাতির জন্য বাজেটে বরাদ্দ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে ন্যূনতম স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না। সার্বক্ষণিকভাবে যেসব নবীন চিকিৎসক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ন্যূনতম দুই বছর অবস্থান করবেন, তারাই তাদের পছন্দ মতো বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুবিধা পাবেন, কারো ক্ষেত্রে নিয়মের হেরফের হবে না।

মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বৈষম্য দুর্নীতির অন্যতম কারণ।

মেডিকেল যন্ত্রপাতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি ক্যানসার ইলেকট্রিক ব্রাকিথেরাপি মেশিনের আমদানি মূল্য প্রায় এক মিলিয়ন ডলার। যার উপর ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক ধার্য করা হয়, যা আপেক্ষিক দৃষ্টিতে বেশি নয়। তবে আমদানি শুল্কের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ অগ্রিম শুল্ক (Advance Tax) এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (Advance Income Tax AIT) এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আছে। আলট্রাসনিক যন্ত্রে শুল্ক ১ শতাংশ কিন্তু কার্ডিয়াক মনিটরের শুল্ক ৫ শতাংশ। মেডিকেল যন্ত্রপাতিতে কেবলমাত্র ১ শতাংশ শুল্ক হতে পারে। তবে অন্য কোনো প্রকার শুল্ক, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর থাকা উচিত নয়। মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানিতে একাধিক শুল্ক হার ও ট্যাক্স থাকায় দুর্নীতির দ্বার সহজে উন্মুক্ত হয়।

খালি প্রিফিল্ড ইনজেকশন (যা ক্যানসার ও বিকল কিডনি রোগীদের ইনজেকশন তৈরির জন্য অপরিহার্য) ইউভি কেনুলা, ফিডিং টিউব, ফিস্টুলা নিডলস, মাথার সূক্ষ্ম শিরায় ব্যবহৃত সুই (Scalp Vein Needles) সাকসন ক্যাথেটারে শুষ্ক ১০ শতাংশ। কিন্তু ইনসুলিন কার্টিজ, শ্রবণ বৃদ্ধি যন্ত্র, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি যন্ত্র (Pace Makers), ভালভ পরিবর্তন (Heart Valve), ওষুধ যুক্ত বা ওষুধ মুক্ত করোনারি স্টেন্ট (Stent) পুরো শুল্কমুক্ত অর্থাৎ শূন্য শুল্কে আমদানিযোগ্য। কিন্তু স্টেন্ট প্রয়োগ চার্জ ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। কারণ কী?

ইনফুউশানে ২৫ শতাংশ, ইসিজি পেপারে ১০ শতাংশ শুল্ক ভুল সিদ্ধান্ত। কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের, যেমন: টেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন প্রভৃতির শূন্য শুল্ক, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিন, এরিথ্রোমাইসিনে শুল্ক ১৫ শতাংশ। আরও উদাহরণ আছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এবং শুল্ক কর্মচারীদের হয়রানি থেকে জনসাধারণকে রেহাই দিতে হলে দুর্নীতির প্রতিটি ছিদ্র বন্ধ করতে হবে।

এনার্জি ড্রিংকস, লবণ, মদ, তামাক, পান, জর্দা প্রভৃতির শুল্ক ২৫ শতাংশ নয় ১০০ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা পরিষদ-বিএমআরসি এর চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত। অতীতে বিএমআরসি-এর অনুমোদন ক্রমে আইসিডিডিআর’বি বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানির পক্ষে ভ্যাকসিন ট্রায়াল করেছে, আপত্তি উঠেনি। কিন্তু আজ বাংলাদেশে চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা পরিষদের অধিকার নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হৈ হৈ রব করে বলছে ভ্যাকসিন ট্রায়াল করার জন্য বিএমআরসির অনুমতি দেওয়ার অধিকার নেই।

বাংলাদেশে চীনের করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে বিঘ্ন সৃষ্টি করে সরকার অত্যন্ত ভুল কাজ করছে।

বাংলাদেশে চীনা করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল যদি স্থগিত হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বোকামির কারণে নতুন ওষুধ তৈরির সক্ষমতা হারাব। কী করে ভাত রান্না করতে হবে, তা শেখার জন্য টেক্সাসের ল্যাবরেটরিতে তাদের গবেষণার নিয়মাবলী অনুসরণের প্রয়োজন নেই। চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হোন, তবে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে নিন, গবেষণা সফল হলে লাভের ৫০ শতাংশের মালিক হবে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করণীয়

১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতিতে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক নীতিমালা সব ওষুধ কোম্পানিগুলোকে অনুসরণে বাধ্য করানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

রোগ নির্ণয় ও অপারেশন চার্জ এবং আইসিইউ চার্জ স্থির করে দিন। দৈনিক আইসিইউ চার্জ সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকার অধিক হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। সরকার নির্ধারিত রোগ নির্ণয় ও অপারেশন চার্জ এবং আইসিইউ চার্জ প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অনুসরণ করছে কি না, সেটি দেখাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব। অন্য কোনো পুলিশি দায়িত্ব অহেতুক এবং কাম্যও নয়।

‘ব্যক্তি মালিকরা’ লাভ ও সেবা দুইটাই ভালো বোঝেন। তাদের দায়িত্ব কি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেওয়া ঠিক হবে? 

চিকিৎসক কত ভিজিট নেবেন তা স্থির করবেন চিকিৎসক নিজে, সরকার নয়। অনুগ্রহ করে বিএমআরসি-এর কাজে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন এবং বাংলাদেশে নিজস্ব পদ্ধতিতে অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন কিট উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে দেশের স্বার্থবিরোধী চক্রের দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না।

ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি স্যানডরকে প্রতিজন বিকল কিডনি রোগীকে হেমোডায়ালাইসিস দেওয়ার জন্য ২১৯৫ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিছু সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিকল কিডনি রোগী ৪০০ টাকায় মাত্র একবার হেমোডায়ালাইসিস পেয়ে থাকেন। সেখানেও দুর্নীতি আছে। বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হেমোডায়ালাইসিস সেন্টার হচ্ছে ‘গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টার’ যেখানে নামমাত্র খরচে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন বিকল কিডনি রোগী হেমোডায়ালাইসিস পেয়ে থাকে।

বার বার আবেদন করার পরও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রোগীদের ৯০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কারণ জানতে চাওয়া কি অন্যায় হবে?

প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাশা

আগামী মাসে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সুবিধা নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধাসহ করোনা সাধারণ ওয়ার্ড চালু করবে ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। রোগীদের সর্বসাকুল্যে দৈনিক খরচ পড়বে তিন হাজার টাকার অনধিক।

আপনি কি এই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধাসহ জেনারেল ওয়ার্ডের উদ্বোধন করবেন?

সুস্থ থাকুন।

ঈদের শুভেচ্ছান্তে,

জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

(সংক্ষেপিত)

Comments

The Daily Star  | English

Mirpur-10 metro station reopens

Mirpur-10 metro station resumed operations this morning, almost three months after it was vandalised and consequently shut down in July

15m ago