কর্মস্থলে হাজির, পুলিশের খাতায় পলাতক
লালমনিরহাটে তিন দফায় সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধারের মামলায় এখনো তিন উপজেলার তিন স্টোরকিপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদানের পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোরকিপার মোয়াজ্জাম হোসেন মুরাদ, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত স্টোরকিপার একেএম মাহবুব আলম ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার মো. জাকারিয়া।
পুলিশ দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, গত ২৩ জুন বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাড়ে ৬ লাখ টাকার সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ শহরের ড্রাইভার পাড়ার আব্দুর রাজ্জাক রেজা ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনকে আটক করে সদর থানা পুলিশ।
আদালতে দেওয়া আটককৃতদের জবানবন্দির পরদিন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান মিজান বাদি হয়ে তিন স্টোরকিপার ও আটক দম্পত্তিসহ সাত জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা (মামলা নং ৬০) দায়ের করেন
আটককৃত দম্পত্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৫ জুন লালমনিরহাট শহরের পুরান বাজার এলাকায় টাউন ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ওই ফার্মেসি থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ছয়টি ধরনের সরকারি ওষুধসহ ফার্মেসি মালিক সারাফাত আলীকে আটক করে পুলিশ। তাকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
ফার্মেসি মালিক সারাফাতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৃতীয় দফায় ৩০ জুন তার বাড়ির পাশে গর্ত খুঁড়ে সাত ধরনের দুই বস্তা সরকারি প্যাকেটজাত ওষুধ উদ্ধার করে পুলিশ।
সরকারি ওষুধ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে গত ২৫ জুন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়।
সেই কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হলেও এখনো তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন।
সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধারের মামলাটি তদন্তের স্বার্থে সদর থানা পুলিশ আদিতমারী, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোরের রেজিস্টার ও ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত তিন স্টোরকিপারকে গ্রেপ্তারের অনুমতি চেয়ে দুই দফায় চিঠি দিয়েও অনুমতি পায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
মামলাটি তদন্তে জঠিলতা সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে গত ২১ জুলাই আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার (ওসি তদন্ত) এরশাদুল আলম।
চক্রটি স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আলোচিত এ মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগকে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েও পুলিশ সহযোগিতা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও কর্মস্থলে হাজির থাকছেন স্টোরকিপাররা। পুলিশের খাতায় তারা রয়েছেন পলাতক হিসেবে।
একই সঙ্গে স্টোরের রেজিস্টার বই ও কাগজপত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে না দেওয়ায় মামলাটির তদন্ত নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে পুলিশ।
লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিন দফায় সাড়ে সাত লাখ টাকার প্যাকেটজাত সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধারের মামলায় তিন জন গ্রেপ্তার থাকলেও চার আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের তিন জনই সরকারি কর্মচারী।’
‘তাদের গ্রেপ্তারের অনুমতি চেয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সিভিল সার্জনকে দুই দফায় চিঠি দিয়েও অনুমতি না পাওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার আসামিকে সাময়িক বহিষ্কারের নিয়ম থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ মামলার কাগজ পেয়েও তা করেননি।’
তারা তথ্য দিয়েও সহায়তা করছে না বলে তিনি অভিযোগ করে ওসি জানান, তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি আদালতকে অবগত করা হয়েছে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না আসায় স্টোরকিপারদের বরখাস্তের প্রশ্নেই উঠে না। পুলিশ যেহেতু মামলার বিষয়ে আমাকে অবগত করেছে তাই পুলিশ ইচ্ছা করলে অফিসের বাইরে স্টোরকিপারদের গ্রেপ্তার করতে পারে। অনুমতির প্রয়োজন কি?’
আইন আইনের গতিতে চলবে বলেও মন্তব্য করেন সিভিল সার্জন।
Comments