ঈদ নেই কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের ৫ লাখ বন্যাদুর্গত মানুষের
পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ বঞ্চিত কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের ১৪টি উপজেলার ৫৫০টি গ্রামের বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ লাখ মানুষ।
ঈদ উপলক্ষে নুতন জামা-কাপড় ও মাংস কেনা তো দূরের কথা অনেকের ঘরে ঈদের দিনও একমুঠো খাবারের ব্যবস্থাও নেই।
ভাত রান্না করলেও নেই তরকারি। আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেতে হচ্ছে ঈদের দিনটিতেও। বন্যা ও ভাঙনে তাদের বসতভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও গৃহপালিত প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় তারা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে উঠেছেন। দু-মুঠো খেয়ে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে তাদের।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে পারেননি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তার আশায় ছিলেন। তবে তারা কোনো সহায়তা পাননি।
‘আমি ঈদ উপলক্ষে আমাদের তিন সন্তানের জন্য পোশাক কিনতে পারিনি। আমার হাতে কোনো টাকা না থাকায় ঈদের জন্য ভালো খাবার ও অন্যান্য জিনিসও কিনতে পারিনি,’ ডেইলি স্টারকে বলেন ধরলাপাড়ের বানভাসি মাজেদুল ইসলাম (৫২)।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চর সোনাইগাজীর এই বানভাসি আরও বলেন, ‘ঈদের দিন সন্তানদের নিয়ে আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। সন্তানরা মাছ-মাংসের জন্য কান্নাকাটি করছে। কিন্তু, তাদের আশা পূরণ করতে পারি নাই।’
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা নয়ারহাট চরে বন্যাদুর্গত আফরোজা পরিবারের লোকজনের জন্য নতুন জামা-কাপড়, ভালো খাবার বা মাংসের ব্যবস্থা হয়নি। পরিবারের বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে।
‘আমরা এখনও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে রয়েছি। বন্যার পানি এখনও আমাদের বাড়িতে। ঈদ আমাদের জন্য কোনো আনন্দ বয়ে আনেনি,’ ডেইলি স্টারকে বলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাতে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার রমনা এলাকার বন্যাদুর্গত সায়েদুর রহমান (৫০)।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে খাবার নেই। তাই ঈদ উপভোগ করা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার চর কালমাটি এলাকার বন্যাদুর্গত আফরোজা বেগম (৪৪) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিন শিশু নতুন পোশাকের জন্য কেঁদেছিল। কিন্তু, হাতে টাকা না থাকায় তাদের জন্য নুতন জামা কিনতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিশুদের এবারের ঈদ উপলক্ষে পুরানো পোশাক পরতে বলেছি। ঈদ আমাদের জন্য কেবল বেদনাই বয়ে এনেছে।’
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বন্যা ও ভাঙনের কারণে আমাদের ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক মানুষ এবার ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না।’
সরকার ঈদুল আজহার আগে অতি-দরিদ্র পরিবারের মধ্যে লালমনিরহাটে ৮৫ হাজার ও কুড়িগ্রামে ৪ লাখ ১৫ হাজার ভিজিএফ চাল বিতরণ করেছে এবং প্রতিটি কার্ডধারীকে ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস।
তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস কোনো আদেশ না পাওয়ায় বন্যাকবলিত মানুষদের ঈদ উদযাপনে সহায়তা করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলেও ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার।
Comments