চট্টগ্রামে কুরবানির মাংস কেনা-বেচার হাট

প্রতিবছরের মতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বসেছে কুরবানির মাংস কেনা-বেচার হাট। ১ আগস্ট ২০২০। ছবি: স্টার

যারা কুরবানির হাটে গিয়ে গরু কিংবা ছাগল কিনার সামর্থ ছিল না তারা মাংস কেনার জন্য হাটে এসেছেন। তাদের জন্য কুরবানির মাংস নিয়ে বসেছেন ঈদের সারাদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করা অতি-নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

গতকাল শনিবার ঈদের দিন বিকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ছোট ছোট পরিসরে বসা এসব হাটে মাংস কিনতে আসেন কুরবানি দিতে না পারা মানুষজন।

পরিবারের সদস্যদের মুখে এক বেলা মাংস তুলে দিতে আসা এসব মানুষের চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। আবার যারা কষ্টের সংগ্রহ করা মাংসটুকু না খেয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের শরীরের ক্লান্তিও আড়াল করতে পারেনি মাংস বিক্রির টাকা।

এসব হাটে প্রতিকেজি হাড়সহ মাংস মানভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সারা দিন মাকে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিন কেজির মতো মাংস সংগ্রহ করেছেন ১০ বছর বয়সী কিশোরী তুলি আক্তার। তুলির মা আকলিমা খাতুন এই তিন কেজি মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সরাদিনের সংগ্রহ করা মাংস বিক্রি করে দেওয়ায় ছোট্ট এ মেয়েটিকে পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে।

আকলিমা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব মাংস মা ও মেয়ে মিলে সংগ্রহ করেছি। অর্ধেক মাংস বিক্রির কথা বলে সব মাংস বিক্রি করে দেওয়ায় মেয়ে আমার ওপর রাগ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতাম। এখন কাজ নাই। সঞ্চয় ফুরিয়ে কিছু দেনা হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই মাংসগুলো বিক্রি করে দিতে হয়েছে।’

আকলিমা খাতুনের মতো শত শত অভাবী নারী-পুরুষ ও শিশুকে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর, বদ্দারহাট, কাজির দেউরি, হামজারবাগ, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড়ে সংগ্রহ করা কুরবানির মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতিবছরই ঈদের দিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এসব মাংস কেনা-বেচা চলে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় মাংস কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক আবুল হাসেম (ছদ্মনাম) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এবার বাড়ি যেতে পারিনি। চুক্তিভিত্তিক গাড়িচালক হওয়ায় গত মাসের বেতন এখনো পায়নি। তাই কুরবানি দিতে পারিনি। কিন্তু, ঘরে বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে কম দামে কিছু মাংস কিনতে এসেছি।’

একই কারণে মাংস কিনতে এসেছেন সংবাদপত্রের হকার আলি হোসেন (ছদ্মনাম)। গত কয়েক বছর ঘরে বায়েজিদ এলাকায় কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কুরবানি দিলেও এবার পারেননি।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত শুক্রবার কুরবানির হাটে গিয়েছিলাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে একটি ছাগল কেনার জন্য। হাটের শেষ দিনে পশুর সংকট থাকায় এই টাকার মধ্যে কোন ছাগল পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই এ টাকা দিয়ে কিছু মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’

কুরবানি দেওয়ার সমার্থ্য না থাকা মানুষের পাশাপাশি কিছু হোটেল ব্যবসায়ীদেরও মাংস সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। কম দামে এসব মাংস কিনে পরবর্তীতে বিক্রির জন্য তারা প্রতিবছরই এসব মাংস সংগ্রহ করেন বলে জানিয়েছেন একাধিক হোটেল মালিক।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago