বৈরুতে স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণ
লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
বিবিসি জানায়, উদ্ধারকর্মীরা এখনও ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বন্দর এলাকার ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে গোটা রাজধানী শহর কেঁপে উঠে।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকায় শুরুতে ধোঁয়ার কুণ্ডুলী দেখা যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তা বিরাট গম্বুজ আকারে ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে বিকট বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন ওড়ে যেতে দেখা যায়।
বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় লেবানন আজ থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করছে।
বন্দরের একটি আতশবাজির গুদামে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণের সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল জানিয়েছে, যারাই এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী হবেন, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
লেবাবননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেন, ‘ছয় বছর ধরে সেখানকার একটি গুদামে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট “অনিরাপদভাবে” মজুত রাখা ছিল।’
এ ঘটনায় বুধবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল।
এছাড়াও দেশটিতে আগামী দুই সপ্তাহ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট মিশেল আরও জানান, তার সরকার বিপর্যয় মোকাবিলায় ৬৬ মিলিয়ন ডলারের জরুরি তহবিল গঠন করবে।
ওই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ২০১৩ সালে বন্দরে অভিযান চালিয়ে একটি জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল।
সেখানকার গুদামে এগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
লেবাননের রেডক্রস প্রধান জর্জ কেত্তানি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যা দেখছি, তা একটি বিশাল বিপর্যয়। সবখানেই ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাসেও ভয়াবহ বিস্ফোরণের কম্পন অনুভূত হয়েছে।
বন্দরের কাছে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপি নিউজকে বলেন, ‘আশেপাশের সমস্ত ভবন ধসে গেছে। আমি অন্ধকারে হেঁটে যাওয়ার সময় সবখানে কাঁচ ও ধ্বংসাবশেষ দেখেছি।’
বৈরুতের গভর্নর মারওয়ান আব্বৌদ জানিয়েছেন, পৌরসভার অন্তত ১০ দমকলকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যা ঘটেছিল তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিস্ফোরণটি আমাকে সেই ঘটনার কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আমার জীবনে, আমি কখনো এতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাইনি।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ায় সেখানে রাজনৈতিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, বিস্ফোরণে আহতদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বৈরুতের হাসপাতালগুলো। অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টার আর কোনো রোগী নিতে পারছে না।
Comments