লেবাননে বিস্ফোরণ: রনির আর বাড়ি ফেরা হলো না

লেবাননের বিস্ফোরণে নিহত মেহেদী হাসান ভূঁইয়া রনি। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ছয় বছর পর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রোমাঞ্চিত ছিলেন লেবানন প্রবাসী ২৫ বছরের যুবক মেহেদী হাসান ভূঁইয়া রনি। মায়ের মুখ দেখতে ব্যাকুল ওই যুবক মার্চেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই প্রস্তুতিতে প্রথমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়  করোনাভাইরাস। এরপর, চার মাস অপেক্ষা শেষে গতকাল বৈরুতের বিস্ফোরণে রনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণে মারা যাওয়া তিন বাংলাদেশির একজন মেহেদী হাসান ভূঁইয়া রনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী ইনারা বেগমের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে মেহেদি হাসান রনি। রনির বাবা তাজুল ইসলাম বাহরাইনে গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফেরত আসার পর সংসারের হাল ধরতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কাজের সন্ধানে লেবাননে গিয়েছিলেন রনি।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পাশাপাশি পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন রনির মা-বাবা। স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ভাদেশ্বরা গ্রামের পরিবেশ।

বুধবার দুপুরে রনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে একাধিকবার মুর্ছা গেছেন তার মা ইনারা বেগম। প্রতিবেশীদের সহায়তায় জ্ঞান ফিরতেই মাতম করছেন। বলছেন, ‘আমার জাদু কই, তোমরা আমার জাদুরে ফিরাইয়া দাও।’ আবার কখনো বলছেন, ‘আমার বাপজানের কিচ্ছু হয় নাই, আবার ফিরা আইবো। বাপজানরে আবার দেখতাম চাই।’

নিহত রনির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছবি: মাসুক হৃদয়

লেবাননে রনির এক রুমমেটের মাধ্যমে বুধবার সকালে তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা তাজুল ইসলাম। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত ছিল রনি।

তাজুল ইসলাম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি বাহরাইন থেকে ফিরে আসায় ২০১৪ সালে রনিকে লেবানন পাঠাই। সংসারে অভাব থাকায় তাকে পাঠাতে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। রনি লেবাননে গিয়ে একটি সুপার শপে ক্লিনারের কাজ নেন। কিন্তু সেখানে তার ইনকাম বেশি না হওয়ায় এখনও সেই ঋণ আমরা শোধ করতে পারিনি।’

প্রতিবেশীরা জানায়, চার শতাংশের ভিটি বাড়িতে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই এই পরিবারটির। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় রনি গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সংসারের হাল ধরতে বিদেশে পাড়ি জমান।

রনির ছোট ভাই সায়মন বলেন, ‘সর্বশেষ ঈদের দিন রাতে ফোন করে সবার খোঁজ খবর নিয়েছিল ভাইয়া। কিন্তু কে জানতো এটাই হবে ভাইয়ার শেষ ফোন।’

রনির চাচা সুমন ভূঁইয়া জানান, রনি প্রতিমাসে মাসে বাড়িতে ২০ হাজার টাকা পাঠাতেন। এদিকে কয়েক বছর ধরে অসুস্থ থাকার কারণে ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারে না রনির বাবা। এ অবস্থায় তাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। ফলে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে এ পরিবারটি। এখনও সুদের দুই লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ বাকি আছে বলে জানালেন তিনি।

রনির বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের দাবি, তার মরদেহ দেশে ফিরে আনতে সরকার যেন উদ্যোগ গ্রহণ করে।

Comments

The Daily Star  | English

Salehuddin urges all to work together to overcome challenges of economy

'We are in the midst of all sorts of challenges,' says the finance adviser

2h ago