নদীভাঙনে গাইবান্ধার কামারজানিতে ৩৫০ পরিবার নিঃস্ব!

চলতি বছর উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে দফায় দফায় বন্যা। দুই দফা বন্যায় গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি। এখন পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন।
গাইবান্ধায় বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। ছবি: স্টার

চলতি বছর উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে দফায় দফায় বন্যা। দুই দফা বন্যায় গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি। এখন পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

জুন মাসের শেষে গাইবান্ধায় প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় এক লাখ ২২ হাজার মানুষ। সেই পানি নেমে না যেতেই জুলাই এ আবার শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। এবার জেলায় আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো মানুষ।

ইতোমধ্যে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি গতকাল প্রথম বারের মতো থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে শত শত মানুষ আবার নতুন করে বসতবাড়ি, ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হতে শুরু করেছে।

এবারের বন্যায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের প্রায় ৩৫০ পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি, জমিজমা, গাছপালা হারিয়েছেন ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক পরিবার সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়িঘর, কেটে ফেলছেন গাছপালা। পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। 

গোঘাট গ্রামের তাপস কুমার শাহার পূর্বপুরুষরা ছিলেন জোদ্দার। তাদের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন শত শত জমির মালিক। গত কয়েক বছর ধরে নদীভাঙনে তাপসের পরিবার আজ নিঃস্ব। তাপস(৫০) বলেন, ‘এই গ্রামে আমার পাকাবাড়ি ছিল। ৬০-৭০ বিঘা ফসলের জমি ছিল। কিন্তু, গত কয়েক দিনে সব গেছে ব্রহ্মপুত্রে! এখন আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’

গাইবান্ধায় বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। ছবি: স্টার

সোমা রানী শাহা (৩০) বলেন, ‘গত রোববার দুপুরে হঠাৎ করে আমার বাড়ি, জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি ছোট দোকান সবসহ মুহূর্তের মধ্যেই নদীতে দেবে গেছে। দোকানের কোনো জিনিসও সরিয়ে নিতে পারিনি। এখন আমি একটি স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি।

প্রতাব কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার নদীভাঙনের কারণে আমাদের এই গ্রামের ৩০০-৩৫০ পরিবার উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেও এখানে ১৫০ বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মন্দির ছিল। এখন সেটিও নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা এখন আশ্রয় ও সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছি। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। জানি না এখন কোথায় যাব!’

সাদ্দাম হোসেন নামে স্থানীয় একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, ‘নদীভাঙন এই এলাকায় প্রতিবছর অনেক মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। গত দুই থেকে আড়াই বছরে এই এলাকার প্রায় দুই হাজার পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শ্যামল সাহা (৪৫) নামে আরও একজন বলেন, ‘নদীভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবলমাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে কাজ দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, এতে কোনো কাজ হয় না। এই এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে আরও অনেক মানুষ নিঃস্ব হবে।’

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এবার জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে প্রায় এক শ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কামারজানিতে একটি মন্দির ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ও নদীর গর্ভে চলে গেছে।

কামারজানির নদীভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে দ্রুত নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। তবে, এই এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ৪০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বর থেকে এখানে সিসি ব্লক দিয়ে কাজ শুরু করতে পারব।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago