দলই চা-বাগানে ‘তীব্র খাদ্য সংকট’
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় দলই বাগানে চা-পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন চা-শ্রমিকরা। অথচ বিগত ১১ দিন ধরে তারা ‘বেকার’। কারণ, চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ১১ দিন আগে হঠাৎই অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ করে দেয়। এতে বড় বেকায়দায় পড়েছেন এসব শ্রমিকরা। কাজ নেই, তাই মজুরিও নেই। নেই ঘরে খাবারও। করোনাকালে এমন পরিস্থিতিতে মারাত্মক দুরবস্থায় পড়েছেন তারা।
চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক বলেন, ‘অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করছেন। এসব ঘর মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। গত ২৭ জুলাই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাগানে কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় কোনো কারণ ছাড়াই কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এ খবর যখন তারা শোনে, তখন তাদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে। এখন এক মুঠো খাবার জোগাতেই হিমশিম অবস্থা তাদের। যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। ঈদের আগে থেকে অমানবিকভাবে চা-বাগান বন্ধ করা হলো।’
দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে ফেরার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে দলই চা-বাগানের নারী শ্রমিক ফাতেমা বেগম বলেন, ‘একটিই কথা, নানা অপকর্মের নায়ক ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে কোনো অবস্থায় এ চা-বাগানে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে তার কিছুসংখ্যক মানুষকে ফোন করে বলেছেন যাতে চা-বাগানে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা হয়। এ কারণে চা-বাগান খুলছে না। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি। কাজ না করলে খাব কী? বুঝতে পারছি না কী করবো।’
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল মোহাইমিন বলেন, ‘করোনা মহামারিকালীন দলই চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে আকস্মিকভাবে কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত ২৭ জুলাই রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধের নোটিশ দেয়।’
‘অথচ বাগান কর্তৃপক্ষ ২৭ জুলাইও পরদিন বিদ্যুৎ থাকবে না বলে শ্রমিকদেরকে অতিরিক্ত হিসেবে তিন গুণ কাজ করতে বাধ্য করেন। কাজ আদায় করে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি পরিশোধ না করে শ্রম আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী বাগান বন্ধের নোটিশ দেয়’, বলেন তিনি।
বাসদের জেলা সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল হাসান বলেন, ‘নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’র ১৩ ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিকপক্ষ তার প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন। কিন্তু, যেহেতু দলই চা-বাগানের উৎপাদন অব্যাহত ছিল, এমনকি ২৭ জুলাইও শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্বিঘ্নে অতিরিক্ত কাজ করেছেন, সেহেতু কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের ১৩ ধারার অপপ্রয়োগ করে শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন।’
মালিকপক্ষের বেআইনি এই সিদ্ধান্তের জন্য তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে দলই চা-বাগান চালুর দাবি জানান অ্যাডভোকেট আবুল হাসান।
চা-শ্রমিক-ছাত্র-যুব মঞ্চের আহ্বায়ক বিপ্লব মাদ্রাজি পাশী বলেন, ‘অবৈধভাবে চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করে দলই চা-বাগান কর্তৃপক্ষ একটি প্রভাবশালী মহলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। শ্রম আইন-বিরোধী এসব কার্যকলাপ বন্ধ করে শিগগিরই বাগান চালু এবং তদন্তপূর্বক বাগান বন্ধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনাকালেও মালিকপক্ষ যদি নমনীয় না হয়, তাহলে সমস্যার সমাধানের কোনো পথ দেখছেন না শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।’
দলই চা-বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয় কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী লোকজন এসে যোগ দেয়। পরে সবাই একত্রিত হয়ে আমাকে বাগান থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হলে মালিক কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করে দেয়।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ‘শ্রম কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশি চা-সংসদ (চা-বাগান মালিকদের সংগঠন) প্রতিনিধিসহ সব পক্ষের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এ বৈঠক করা হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো মিটিং ব্যবস্থাপকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়নি। তাই আগামী সপ্তাহে পরবর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাই আপাতত পরবর্তী সিদ্ধান্ত ছাড়া দলই চা-বাগান বন্ধ থাকছে।’
Comments