সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ১০

কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শাহেদুল ইসলাম সিফাত এর মুক্তির দাবিতে বরগুনার বামনা উপজেলা শহরে মানববন্ধনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
কক্সবাজারে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে থাকা শাহেদুল ইসলাম সিফাত এর মুক্তির দাবিতে শনিবার বরগুনার বামনায় মানববন্ধনে পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: সোহরাব হোসেন

কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শাহেদুল ইসলাম সিফাত এর মুক্তির দাবিতে বরগুনার বামনা উপজেলা শহরে মানববন্ধনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সিফাতের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলা শহরের কলেজ রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশী হয়রানি এড়াতে আহতরা ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিফাতের সহপাঠীরা আজ দুপুর বারোটার দিকে বামনা উপজেলা শহরের কলেজ রোড এলাকায় মানববন্ধন করে। শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন চললেও সেখানে হঠাৎ পুলিশ এসে ব্যানার-ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়।

এরপর, বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের লাঞ্ছিত করেন এবং লাঠিপেটা করার নির্দেশ দেন। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে, মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। ওসি নিজেও লাঠিচার্জে অংশ নেন।

লাঠিচার্জে আহত রুবেল বলেন, ‘সিফাত খুব ভালো ছেলে। সিফাতের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ কোনোভাবেই মানা যায় না। সিফাত মিথ্যা মামলায় কারাগারে। আমি তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। পুলিশ প্রথমে আমাদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। তারপরেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালাচ্ছিলাম। পরে, বামনা থানার ওসি এসে আমাদের নির্বিচারে পেটানো শুরু করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করার জন্য পুলিশ আমাদের দুষ্কৃতিকারী বলে। সিফাতের দাদা আইয়ুব আলী হাওলাদারও তার নাতির মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। পুলিশ তাকেও হুমকি দেয়।’

সিফাতের দাদা বলেন, পুলিশ আজ যা করেছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি।

সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: সোহরাব হোসেন

বামনা থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, এক দল দুষ্কৃতিকারী অনুমতি ছাড়াই রাষ্ট্রবিরোধী মানববন্ধন করছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে বলে, আমি মানববন্ধন বন্ধ করেছি।’

সিফাতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সিফাত বড়। সিফাতের একমাত্র বোন অনন্যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের বাবা-মায়ের ১০ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের পর, মা শিরিন আক্তার শিলা নয় বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। তার বাবা মো. মোস্তফা ঢাকায় থাকেন।

বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামে সিফাত তার শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন। ২০১৪ সালে সিফাত বামনা উপজেলা শহরের সরোয়ার জান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৬ সালে বামনা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর, তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন।

ঢাকায় ভর্তি হওয়ার পর, সিফাত তার খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। বছরে দু-চারবার তিনি ক্যামেরা নিয়ে বামনা আসতেন। ছবি তোলার নেশায় তিনি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন।

এই সংবাদদাতা বেশ কয়েকবার বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমি বরগুনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভায় ছিলাম। ঘটনার বিষয়ে জেনে আমি কথা বলব।’

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-led interim govt takes charge

2 months of interim govt: Hopes still persist

The interim government had taken oath two months ago with overwhelming public support and amid almost equally unrealistic expectations.

1h ago