সুযোগ-সুবিধার জীর্ণ দশায় তৃণমূলের উঠে আসার পথ দুর্গম

রাজধানী ঢাকা থেকে ঘণ্টা দেড়েক দূরত্বের জেলা মানিকগঞ্জে গেলেই টের পাওয়া যায়, ক্রিকেটারদের দাবিগুলো মূলত উবে গেছে হাওয়ায়।

২০১৯ সালের অক্টোবরে ১১ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। পরে আরও দুই দফা যুক্ত করেন তারা। তারমধ্যে একটা ছিল সারাদেশে প্রয়োজনীয় জিম, ইনডোর ও মাঠের সুবিধা বাড়াতে হবে।

সেই ‘আন্দোলনের’ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কতটা বদলালো আসলে ছবি? রাজধানী ঢাকা থেকে ঘণ্টা দেড়েক দূরত্বের জেলা মানিকগঞ্জে গেলেই টের পাওয়া যায়, ক্রিকেটারদের দাবিগুলো মূলত উবে গেছে হাওয়ায়।

অথচ মানিকগঞ্জ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশের হয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বেশ কয়েকজন কীর্তি খেলোয়াড়। ক্রিকেটে নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মোরশেদ আলী খান সুমন, নাদিফ চৌধুরী, ফুটবলে শফিউল আরেফীন টুটুল, মোশারফ হোসেন বাদল, আশরাফুল ইসলাম রানা ও সোহেল আল মাসুম, হকিতে জাহিদ হোসেন রাজু, মশিউর বিপ্লব, দাবায় নাজরানা খান ইভাসহ অনেকেই।

কিন্তু বর্তমানে সেখানে খেলাধুলোর সুযোগ সুবিধা বড়ই নাজুক। জেলার একমাত্র স্টেডিয়ামটি ১৯৬৩ সালে ৩.৯৮ একর জমির উপর নির্মিত।

মূল মাঠ ছাড়াও রয়েছে ১০ কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন, পাঁচ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারী। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় মানিকগঞ্জের দুই কৃতি ক্রীড়াবিদ- শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম. মিরাজ উদ্দিন ও শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা তপন চৌধুরীর নামে ‘শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম’।

বছরব্যাপী নানান খেলার সূচি থাকলেও সংস্কারের কোন আলো লাগেনা এই মাঠের গায়ে। ফলে জীর্ণ শীর্ণ করুন দশা এই স্টেডিয়ামের।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা বলেন, মানিকগঞ্জের কৃতি খেলোয়ারগণ দেশের হয়ে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা পালন আসছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় এবং জরাজীর্ণ অবকাঠামো সংস্কার না করায় মানিকগঞ্জের সার্বিক ক্রীড়া চর্চা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। সার্বিক ক্রীড়া উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জে একটি ইনডোর স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।

জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক মশিউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়ার জন্য একটি উর্বর ভূমি। এই জেলার খেলোয়াড়রা সবসময় জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা হিসেবে মানিকগঞ্জে এখনও তেমন কোন ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া দরকার।’

শেখ রাসেল ক্লাবের গোলরক্ষক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম রানার মতে নূন্যতম সুবিধা অনেক আগেই করা দরকার ছিল, ‘এখনও জেলায় একটি ইনডোর স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল তৈরি হয়নি-এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেক আগেই এগুলো হওয়া দরকার ছিলো।’

দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জের ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত শহিদুল হক খোকন। জেলা ফুটবল  দলের এই কোচের কণ্ঠে একটা সাধারণ মানের জিমনেশিয়াম না থাকার আক্ষেপ, ‘একজন খেলোয়াড়ের শরীর গঠনের জন্য অবশ্যই শরীর চর্চা করা দরকার। এর জন্য প্রয়োজন জিমনেশিয়াম তৈরি করা।এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখা দরকার।’

এদিকে জাতীয় হকি দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিকেএসপির হকি দলের প্রধান কোচ জাহিদ হোসেন রাজু জানান, নূন্যতম সুযোগ সুবিধা না থাকায় নতুন প্রতিভা তুলে আনতে কতখানি বেগ পেতে হচ্ছে তাদের, ‘মানিকগঞ্জের অনেকেই এখনও জাতীয় দলে খেলছে। মানিকগঞ্জে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। কিন্তু জিমনেশিয়ামসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে খেলোয়াড়দের চর্চার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। তাদের উঠে আসার পথ তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে না।’

এতসব সংকট সত্ত্বেও মানিকগঞ্জের খেলোয়াড়রা কিন্তু মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছেন।  গতবছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ (বালক: অনূর্ধ্ব-১৭) টুর্নামেন্টে ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন,   জেএফএ কাপ (অনূর্ধ্ব-১৪) জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জোনাল চ্যাম্পিয়ন, অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে ঢাকা বিভাগে রানার্স আপ এবং জাতীয় যুব গেমসে মানিকগঞ্জের অ্যাথলেটরা ৭টি স্বর্ণপদক অর্জন করে। এছাড়া, অসংখ্য খেলোয়াড় ঢাকার মাঠে বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা না বাড়লে কিশোর পর্যায়ে সম্ভাবনা দেখালেও আরও উপরে যাওয়া হবে না তাদের।  

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস অবশ্য কিছুটা আশার আলো দিলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছ থেকে পরিত্যক্ত টাউন হলের জায়গাটি বরাদ্দ চেয়ে সেখানে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে এটা করার ব্যাপারে আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবো।’

খেলাধুলার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষমতা সাবেক এক খেলোয়াড়ের হাতেও আছে।  বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সংসদে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটির সদস্যও তিনি। জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা পেলে ইনডোর নির্মাণের আশা দেখালেন নাঈমুরও,  ‘প্রত্যেক জেলায় ইনডোর ফ্যাসিলিটির জন্য অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের ঘোষণা রয়েছে। জেলা প্রশাসক জায়গাটি ক্রীড়া সংস্থার নামে বরাদ্দ দিলে কাজটি করা সহজ হবে।’

এছাড়া বিসিবির অর্থায়নে মানিকগঞ্জে ক্রিকেট একাডেমীসহ একটি মাঠ করার ভাবনার কথাও জানান বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক।

তেমনটা না করলে মানিকগঞ্জ থেকে পরবর্তী দুর্জয় বা আশরাফুল রানার দেখা পাওয়াই যে মুশকিল।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago