বৈরুত বিস্ফোরণে স্বপ্নভঙ্গ নারায়ণগঞ্জের রাশেদের

​করোনা মহামারিতে লকডাউনের কারণে লেবাননে কষ্টে দিন যাপন করছিলেন মো. রাশেদ। সেখানে তার খালাতো ভাইসহ অন্য সহকর্মীরা দেশে ফিরে আসার জন্য তাদের সঙ্গে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছিল রাশেদকে। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে, কষ্ট হলেও আরও দুই বছর থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
বৈরুত বিস্ফোরণে নিহত রাশেদ। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারিতে লকডাউনের কারণে লেবাননে কষ্টে দিন যাপন করছিলেন মো. রাশেদ। সেখানে তার খালাতো ভাইসহ অন্য সহকর্মীরা দেশে ফিরে আসার জন্য তাদের সঙ্গে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছিল রাশেদকে। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে, কষ্ট হলেও আরও দুই বছর থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

‘তারপর এসে বাড়ি করবে, বিয়ে করবে, ভাগ্নিকে ডাক্তারি পড়াবে আরও কত স্বপ্নের কথা বলেছে সে আমাকে। কিন্তু, আল্লাহ আমার ছেলেকেই নিয়ে গেছে। আমার বাগানের ফুলই আল্লাহর পছন্দ হইছে। আমারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।’ কথাগুলো বলে আহাজারি শুরু করেন বৈরুত বিস্ফোরণে নিহত নারায়ণগঞ্জের মো. রাশেদের মা লুৎফন্নেছা।

আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নন্দলালপুর এলাকায় নিহত রাশেদের (৪০) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করছেন। সন্তান হারানোর বেদনায় লুৎফন্নেছা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। অপরিচিত কেউ ঘরে গেলে একটিই আহাজারি, ‘আমার বাবাধনের লাশটা আইনা দাও।’

গত ৫ আগস্ট সকালে সন্তান নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর থেকেই তাদের ঘরে আর চুলা জ্বলছে না। প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।

মা লুৎফন্নেছা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন আমার তো চাওয়ার কিছু নাই। আমি চাই দ্রুত যেন আমার বাবাধনের লাশ দেশে আসে। আমি শুধু বাবাধনের লাশটা চাই।’

রাশেদের বাবা মৃত হাফিজুর রহমান। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ার সময় মা, দুই বোন ও ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব তাকে দিয়ে যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রাশেদ।

কান্না জড়িত কণ্ঠে মা লুৎফন্নেছা বলেন, ‘ঈদের এক সপ্তাহ আগে আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমার মোবাইল নেই। তাই বার বার মোবাইল কিনতে বলেছিল। এখন আমি কার সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল কিনব।’

গত ৪ আগস্ট বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নিহত এবং আহত হয়েছে চার হাজারের বেশি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্যসহ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচ জন।

রাশেদের মা লুৎফন্নেছা। ছবি: স্টার

রাশেদের বড় বোন শাহনাজ পারভীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বৈরুতে যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখান থেকে এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে জিমাইজি নামের হোটেলে ছিল রাশেদ। ঘটনার পর পাঁচ দিন রাশেদের খোঁজ পাইনি। হোটেলের মালিক জানায়, বিস্ফোরণের সময় হোটেল থেকে বের হবার সময় একটি জানালার কাঁচ ভেঙে তার উপর পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

‘রোববার রাতে লেবাননে কর্মরত খালাতো ভাই জনি নিশ্চিত করে আমার ভাই মারা গেছে। লাশ পাঁচ দিন ধরে মর্গে পড়ে আছে,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ২২ জুন লেবানন যায় রাশেদ। সেখানে লকডাউন শেষ হলে খালাতো ভাই ও রাশেদের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু, ভাই আরও দুই বছর পর দেশে আসবে বলেছিল। এখন আমার ভাই সবার আগে আসবে, কিন্তু লাশ হয়ে।’

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। রাশেদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago