নিরস্ত্র সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত: সিফাত

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে মেজর (অব.) সিনহা ও তার সফরসঙ্গী সিফাত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) চেকপোস্টে তাদের পরিচয় দেওয়ার পর এপিবিএন তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু, ঠিক এর পরপরই পরিদর্শক লিয়াকত তাদের গাড়ির কাছে আসেন এবং তাদের পরিচয় শোনামাত্রই দৌড়ে গিয়ে গাড়ির সামনে একটি ড্রাম রেখে দেন।
সিনহা মো. রাশেদ খান। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে মেজর (অব.) সিনহা ও তার সফরসঙ্গী সিফাত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) চেকপোস্টে তাদের পরিচয় দেওয়ার পর এপিবিএন তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু, ঠিক এর পরপরই পরিদর্শক লিয়াকত তাদের গাড়ির কাছে আসেন এবং তাদের পরিচয় শোনামাত্রই দৌড়ে গিয়ে গাড়ির সামনে একটি ড্রাম রেখে দেন।

গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে মারা যান মেজর (অব.) সিনহা। ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিবরণ দেওয়ার সময় এসব তথ্য দেন সিফাত। গ্রেপ্তারের দিন (৩১ জুলাই) ধারণ করা সেই ভিডিওটি গতকাল বুধবার প্রচার করা হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ২৪ এ।

সিফাত বলেন, ‘আমি নেমে পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করেছি। যখন পেছনের দিকে আসছি তখন উনিও (সিনহা) নেমেছেন গাড়ির দরজা খুলে। উনি নেমে বলছিলেন যে, “কাম ডাউন, কাম ডাউন”। এরপর গুলির শব্দ শুনেছি। তখন আমি দেখি সিনহা ভাই মাটিতে পড়া।’

কক্সবাজারের একটি আদালত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ সাত জনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করার পর পুলিশ সিফাতের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে করে এর দায় চাপাতে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় মাদক মামলাও। অভিযুক্ত সিফাতকে গত ১০ আগস্ট জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার দিন সম্পর্কে সিফাত বলেন, ‘আমাদের হাতে ট্রাইপড ছিল। খুব সম্ভবত কেউ বুঝতে পারেনি। কিন্তু, পাহাড় থেকে নামার সময় আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।’

‘যখন পৌঁছেছি (চেকপোস্টে) তখন বাকি যে ওসি স্যাররা ছিলেন, তারা আমাদের বলেছিলেন যে “আচ্ছা ঠিক আছে, আপনারা যান”। তো তারপরে আমরা গ্লাস ওঠানোর সময় উনি (লিয়াকত) এসেছেন। উনি এসে বললেন যে, “দাঁড়ান, আবার বলেন”।’

‘পরিচয় শোনামাত্রই, উনি দৌড়ে গিয়ে ড্রামটা সামনে দিলেন।’

এর কিছু সময় পরই গুলির শব্দ পান সিফাত এবং মেজর (অব.) সিনহাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।

‘তখনও আমি ভেবেছি হয়তো তার (সিনহা) শরীরে লাগেনি, হয়তো ফাঁকা আওয়াজ করেছে আশেপাশে, তিনি শুয়ে গেছেন মাটিতে। কিন্তু, তারপর দেখি যে তার (সিনহা) শরীর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।’

সিফাত আরও বলেন, ‘সিনহা সাহেব যখন গাড়ি থেকে নামলেন, আমি তখন দেখেছি পিস্তলটা উনি রেখেছেন (গাড়ির ভেতরে)। দুই হাত তুলে উনি বের হচ্ছেন দরজা খুলে। পরে আমি পেছনে ছিলাম, তিনি নিচু ছিলেন। গাড়ির জন্য আমি আর তার পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।’

সাত জন রিমান্ডে

কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে র‌্যাব। তারা সবাই সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের দায়ের করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি।

গত ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করা পুলিশের সাত সদস্যের মধ্যে এই চার জনও ছিলেন। এর আগেও জেলগেটে সাফানুর, কামাল, মামুন ও লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) অনুমতি দিয়েছিলেন আদালত।

গত মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার জামিল উল হক কক্সবাজারের মারিশবানিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা তিন আসামি নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মো. আয়াশকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

সিনহা হত্যার পর পুলিশের দায়ের করা মামলায় এই তিন জনকে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফার বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, টেকনাফের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ আলাদা রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সাত দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আগামীকাল অভিযুক্ত সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে নেব।’

তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক নন্দদুলাল রক্ষিতকে।

৬ আগস্ট এই তিন জনের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

উল্লেখ্য, ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার যান মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। গত ৩১ জুলাই রাতে শুটিং করে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে ফিরছিলেন তিনি।

পথে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুরে তার গাড়িটি থামায় পুলিশ।

পুলিশের দাবি, তারা যখন গাড়ির ভেতরে পরিদর্শন করতে যাচ্ছিলেন, তখন সিনহা তাদের দিকে বন্দুক তাক করেন। নিজেকে ও সঙ্গী পুলিশ সদস্যদের রক্ষার্থে সিনহাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান পরিদর্শক লিয়াকত।

এ সময় তারা গাড়ি থেকে মাদকদ্রব্যও জব্দ করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে, পুলিশের বিবরণের সঙ্গে মিল নেই প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া ঘটনার বিবরণে। তারা জানিয়েছেন, সিনহা তার মাথার পেছনে হাত রেখে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন এবং পুলিশ তাকে সেই অবস্থাতেই গুলি করে।

আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার ৮ আসামি আদালতে, প্রদীপ দাশকে নেওয়া হচ্ছে কক্সবাজার

টেকনাফে নিহত সাবেক মেজর সিনহার মাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন, বিচারের আশ্বাস

পুলিশের গুলিতে সাবেক মেজর নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু

মেজর সিনহার বড় বোনের হত্যা মামলা দায়ের

এএসআই লিটন, কনস্টেবল কামালসহ ৪ আসামিকে রিমান্ডে চায় র‍্যাব

৩ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি এখনো কারাগারে

সিনহা হত্যায় পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে কক্সবাজারের এসপিকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে: রাওয়া চেয়ারম্যান

সিনহা হত্যায় পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীকে কারাগারে প্রেরণ

সিনহা হত্যায় ৩ সাক্ষী ও ৪ পুলিশ সদস্য ৭ দিনের রিমান্ডে

সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ-লিয়াকতসহ ৩ আসামি রিমান্ডে

সিনহা হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ দাশসহ ৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

সিনহা হত্যা মামলার ৪ আসামিকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago