তিস্তার ভাঙনে হারিয়ে গেলো একটি গ্রাম

ঈদের দুদিন আগেও তিস্তাপাড়ে একটি গ্রাম ছিল। নাম ছিল ‘সিঙ্গীমারী’। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের এই গ্রামটিতে বাস করতো ৩৮৫টি পরিবার। বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত ছিল গ্রামটি। ছিল আবাদি ফসলে ভরা জমি, ফলের বাগান, নানা প্রজাতির গাছ-পালা, বৃক্ষ। কিন্তু, এখন আর কিছুই নেই। শুধু আছে পানি আর পানি। তিস্তা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। আর সেখানে চলাচল করছে নৌকা।
এখন আর কিছুই নেই। শুধু আছে পানি আর পানি। তিস্তা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। আর সেখানে চলাচল করছে নৌকা। ছবি: এস দিলীপ রায়

ঈদের দুদিন আগেও তিস্তাপাড়ে একটি গ্রাম ছিল। নাম ছিল ‘সিঙ্গীমারী’। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের এই গ্রামটিতে বাস করতো ৩৮৫টি পরিবার। বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত ছিল গ্রামটি। ছিল আবাদি ফসলে ভরা জমি, ফলের বাগান, নানা প্রজাতির গাছ-পালা, বৃক্ষ। কিন্তু, এখন আর কিছুই নেই। শুধু আছে পানি আর পানি। তিস্তা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। আর সেখানে চলাচল করছে নৌকা।

এই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন (৭০) বলেন, ‘ঈদের দুদিন আগেও সুখে ছিলাম। হাসিমুখেই ছিলেন গ্রামের সবাই। ঈদের একদিন আগে ৩১ জুলাই ভোর থেকে গ্রামে শুরু হয় ছুটাছুটি। আকস্মিক ভয়াবহ হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর ভাঙন। একের পর এক ভাঙতে থাকে বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান ও স্থাপনা। ঈদের দিন ভাঙন আরও বেশি তীব্র আকার ধারণ করে।’

‘গ্রামের মানুষজন ভাঙন থেকে বাড়ি-ঘর রক্ষা করতে যার যার মতো করে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যেতে থাকে। ৭ আগস্টের মধ্যে পুরো গ্রামটি চলে যায় তিস্তার উদরে। বসতভিটা, আবাদি জমি সবকিছু হারিয়ে আমরা আশ্রয় নিয়েছি সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমির উপর,’ বলেন তিনি।

‘ঈদের দিন তিস্তার ভাঙন এমন তীব্র হয় আমরা চোখ স্থির করার সময় পাইনি। ঈদের নামায, খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন ঘর-বাড়ি ও জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তারপরও অনেক কিছু রক্ষা করতে পারিনি,’ বলেন আকবর আলী (৪৮)।

‘আমাদের গ্রামটির আর কোনো চিহ্ন নেই। পুরো গ্রামটি তিস্তা নদীতে পরিণত হয়েছে। গ্রামের দিকে কোনো দিশে পাওয়া যাচ্ছে না এখন আর। শুধু পানি আর পানি। তিস্তার ভাঙনে পড়ে আমরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেলাম। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে মানেবতর জীবন যাপন করছি,’ যোগ করেন তিনি।

ঈদের দুদিন আগেও তিস্তাপাড়ে একটি গ্রাম ছিল। নাম ছিলো ‘সিঙ্গীমারী’। গ্রামটিতে বাস করতো ৩৮৫টি পরিবার। ছবি: এস দিলীপ রায়

এই গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বলেন, ‘চোখের সামনেই সাজানো গোছানো গ্রামটি তিস্তা নদীর গর্ভে চলে গেলো। নিমিষেই সবকিছু ভেঙে ভেঙে একাকার করে দিলো। মানচিত্র থেকে মুছে গেলো সিঙ্গীমারী নামের গ্রামটি। তাদের ঠিকানায় আর সিঙ্গীমারী লেখা হবে না। অন্য গ্রামের বাসিন্দা হয়ে গেলাম। আমি ভাবতেই পারিনি তিস্তা নদী এভাবে আমাদের গ্রামটি কেড়ে নিবে।’

ভাঙনকবলিত কৃষক বদিয়ার রহমান (৬৫) বলেন, ‘পুরো গ্রামটি যাওয়ারপরও বসতভিটা টিকে ছিল। কিন্তু, আমার বসতভিটাটাও ১৪ আগস্ট শুক্রবার বিকালে তিস্তার গর্ভে চলে গেছে। গ্রামের শেষ স্মৃতির বসতভিটাটি তিস্তার গর্ভে চলে যাওয়ায় সিঙ্গীমারী গ্রামের আর কোনো স্মৃতি চিহ্নই থাকলো না। আমি ঘর-বাড়ি নিয়ে পামের গ্রামের এক আত্মীয়র জমিতে আশ্রয় নিয়েছি।’

মহিষখোঁচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে সিঙ্গীমারী গ্রামটি চিরতরে মুছে গেল। সিঙ্গীমারী বলে আর কোন গ্রামের নাম ঠিকানা থাকলো না তার ইউনিয়নে। এই গ্রামের লোকজন বসতভিটা, আবাদি জমি হারিয়ে এখন ভূমিহীন নিঃস্ব হয়েছে। তারা আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমির উপর। তিস্তাপাড়ের মানুষ সবকিছু হারিয়েও কোন ত্রাণ চাচ্ছেন না। তারা শুধু দাবি করছেন তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ। এ বাঁধ হলে রক্ষা পাবে তাদের অনেক সম্পদ।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আকস্মিক ভাঙনে নিমিষের মধ্যেই তিস্তা নদী সিঙ্গীমারী গ্রামটি গ্রাস করে ফেলেছে। সেখানে জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন ঠেকানোর কোনো সময়ই পাওয়া যায়নি। তিস্তা নদীর বামতীরে বাঁধ নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং তা যেকোনো সময় বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English
Sheikh Hasina's Sylhet rally on December 20

Hasina likely to kick off AL campaign with Sylhet rally on Dec 20: Quader

Prime Minister Sheikh Hasina, also the president of the ruling Awami League, will formally kick off the election campaign of the ruling party from a rally in Sylhet likely to be held on December 20.

3h ago