সিনহার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির গণশুনানি আগামীকাল

সিনহা মো. রাশেদ খান। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে গণশুনানি করতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে গত বুধবার (১২আগষ্ট) সন্ধ্যায় একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আগামীকাল সকাল ১০টায় ওই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে এই গণশুনানিতে প্রত্যক্ষদর্শীদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

গত বুধবার কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও সিনহার মৃত্যুজনিত ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাজাহান আলীর স্বাক্ষরে এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আজ শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে এই আলোচিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম শামলাপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেখানে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন। আশ-পাশের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। 

এ ঘটনায় মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং দুই নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। এ দুজন ছাড়াও মামলায় আরও সাত পুলিশ সদস্যকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। পরে ওই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব আরও তিন জনকে আসামি করে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে।

আলোচিত এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। টুটুল ও মোহাম্মদ মোস্তফা পলাতক রয়েছে।

এ পর্যন্ত ১০ জন আসামির প্রত্যেককে সাতদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ১০ জনের মধ্যে সাত আসামি এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও আয়াছ উদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শুক্রবার কারাগার থেকে র‍্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ওই কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।

প্রথমে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ১০ আগস্ট অতিরিক্ত আরও সাত কর্মদিবস সময় বৃদ্ধি করে মন্ত্রণালয়। কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে গত ৪ আগস্ট থেকে।

কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলী।

এই গণশুনানীর বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র পরিচালিত হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম (এইচআরডিএফ) কক্সবাজারের যুগ্ম আহবায়ক আইনজীবি আবদুল শুক্কুর বলেন, ‘সত্য উদঘাটনের জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়ে থাকে। এতে যদি স্বাধীনভাবে মানুষের মত প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয় তাহলে তা ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের আয়োজন স্থনীয় মানুষের মনে প্রশাসনের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।’ 

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

17h ago