বন্যার ভয়াবহতা ছাপিয়ে চলনবিলের সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমীদের

রাস্তার দুই পাশের পানির মাঝে সবুজের সমারোহ দেখে মনে হবে যেন কোনো দ্বীপ মত মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। ছবি: স্টার

ভরা বর্ষায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত, পানিবন্দি হয়ে ঘরছাড়া কয়েক লাখ মানুষ। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা নদীপারের মানুষ। বন্যার এমন ভয়াবহতার মাঝে বর্ষার শোভায় চলনবিল সেজেছে প্রকৃতির শোভায়। বন্যায় যখন পুরো উত্তরাঞ্চল ভাসছে, তখন চলনবিলের প্রতিটি কোণা টইটুম্বুর পানিতে।

চলনবিলের বিশাল এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে মেলে ধরেছে চলনবিলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য। আর এই সৌন্দর্য আকৃষ্ট করেছে প্রকৃতি প্রেমীদের। বর্ষার এ অপরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে প্রতিদিন চলনবিলের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। পুরো চলনবিল জুড়ে এখন প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড়ে পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে।

তবে এই উৎসব মুখরতা মাত্র অল্প কিছুদিনের জন্য। কারণ বন্যার পানি নেমে গেলে আবারও সৌন্দর্য হারাবে চলনবিল।

চলনবিলের সৌন্দর্য দেখতে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বাউশা ব্রিজে ছুটে যায় মানুষ। এটি চাটমোহর-মান্নান নগর সড়কের একটি স্থান, যেখানে বিকাল হলেই দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষের ভিড় জমে। এটা কোনা পর্যটন কেন্দ্র নয়। তবে, চলনবিলে পানির প্রবাহ এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। রাস্তার দুই পাশের পানির মাঝে সবুজের সমারোহ দেখে মনে হবে যেন কোনো দ্বীপ মত মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। পানিতে পরিপূর্ণ চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই নৌকা ভ্রমণে বেড়িয়ে পরেন।

বাউশা ব্রিজে ঘুরতে আসা ফারহানা ইলা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চাকরির ফাঁকে সময় পেলেই ছুটে আসি চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। চলনবিলের এ সৌন্দর্য হয়ত আর কয়েক সপ্তাহ পরেই পাওয়া যাবে না। তাই বারবার প্রকৃতির কাছে ছুটে আসি।’

‘পানিতে পরিপূর্ণ চলনবিল দেখলে মনে হয় যেন শান্ত সমুদ্র। সারা বছর যদি এভাবে চলনবিলে পানি থাকত, তাহলে চলনবিল হত দেশের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান,’ যোগ করেন তিনি।

পানিতে পরিপূর্ণ চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই নৌকা ভ্রমণে বেড়িয়ে পরেন। ছবি: স্টার

চলনবিল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চলনবিলের প্রতিটি কোণা এখন পানিতে পরিপূর্ণ। তাই চলনবিলের সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষকে। চলনবিলের প্রতিটি এলাকাই এখন মানুষের পদচারনায় মুখরিত। তবে অপরিকল্পিত উন্নয়ন চলনবিলকে ধ্বংস করেছে। ফলে এ সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী।’

মিজানুর রাহমান আরও বলেন, ‘চলনবিল বাংলাদেশের একমাত্র বিল, যেখানে সারাবছর পানির প্রবাহ থাকে। কিন্তু দিনের পর দিন উন্নয়নের নামে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প চলনবিলের পানির উৎস নষ্ট করে ফেলেছে। ফলে ভরা বর্ষায় চলনবিলে পানি থাকলেও, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার শুকিয়ে যাবে।’

চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার মান্নান নগর সড়ক, ভাঙ্গুরা উপজেলার হাটগ্রাম, দিলপাশরা, নাটোরের গুরুদাশপুর, সিংরাসহ প্রতিটি এলাকাতেই এখন মানুষের ভিড়। স্থানীয়রা ছাড়াও আশেপাশের এলাকা থেকে এখানে ছুটে আসছেন অনেকেই। যদি সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যায়, তাহলে চলনবিল হতে পারে দেশের বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র, এমনটিই মনে করেন মিজানুর রহমান।

পাবনা শহরের কালাচাদপারা এলাকার ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চলনবিলের সৌন্দর্য শুধু পাড়ে দারিয়ে উপভোগ করা সম্ভব নয়। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে নৌকা ভ্রমণে বের হই। বন্যার ভয়াবহতাকে ছাপিয়ে চলনবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের মনে প্রাণ সঞ্চার করেছে।’

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

54m ago