‘প্রয়োজনে গরু বেইচ্চা কাঁঠাল কিননা খামু’

ছবি: স্টার

চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এমন প্রবাদ প্রচলিত আছে যে ‘প্রয়োজনে গরু বেইচ্চা কাঁঠাল কিননা খামু’। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার পাঁচ শতাধিক চরাঞ্চলে বসবাসকারীদের কাছে প্রিয় ফল কাঁঠাল। চরাঞ্চলের শিশু-বয়স্ক সবার কাছে এ ফলের চাহিদা সব চেয়ে বেশি।

মৌসুমি এ ফল কেনার জন্য চরাঞ্চলের মানুষ মূল ভুখণ্ডের হাট-বাজারে ভিড় করে থাকেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র চর শিবেরপাছির কৃষক সেকেন্দার আলী (৫২) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যাত্রাপুর হাটে শুধু কাঁঠাল কেনার জন্য ৪০ টাকা নৌকা ভাড়া করে এসেছি। ছয়টি কাঁঠাল কিনেছি ২১০ টাকায়। কাঁঠালের প্রতি পরিবারের সবার চাহিদা।’

একই হাটে ব্রহ্মপুত্রের চর পাঁচবিবি থেকে আসা কৃষক নবির হোসেন (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চালভাজার গুড়ার সঙ্গে কাঁঠাল খেলে সারাদিন খিদা লাগে না। এবার বন্যার সময় কাঁঠাল আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে।’

‘প্রয়োজনে গরু বেইচ্চা কাঁঠাল কিননা খাওনোর অভ্যাস আমাদের আছে। কাঁঠাল আমাদের পছন্দের ফল,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকন্ডা ইউনিয়নে তিন্তা নদীর চর গোকুন্ডার কৃষক মেহের আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মূল ভূখণ্ডের মানুষজন কাঁঠাল পছন্দ না করলেও কাঁঠাল আমাদের কাছে অতিপ্রিয় ফল। মৌসুমে প্রায় প্রতি দিনই সংসারের সবাই কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। হাতে টাকা না থাকলে ঋণ করে হলেও কাঁঠাল কিনি।

গত বছর একটা ছাগল বিক্রি করে কাঁঠাল কেনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাঁঠাল পাইলে বাড়ির সবাই খুশি হয়।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর চর শিবেরকুটির কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বন্যা আর নদীভাঙনের কারণে চরের মাটিতে আম-কাঁঠালসহ অন্য ফলের গাছ লাগাতে পারি না। প্রিয় ফল কাঁঠাল মূল ভূখণ্ডের হাট-বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়।’

তিনি জানান, চরের মানুষ বিশ্বাস করেন কাঁঠাল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কাজ করার ক্ষমতা থাকে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটে কাঁঠাল ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁঠাল কিনে নদী তীরবর্তী হাট-বাজারে বিক্রি করি। চরের মানুষ সন্তোষজনক দামে কাঁঠাল কিনে থাকেন। এক একটি কাঁঠাল ১৫ থেকে ২৫ টাকা কিনে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি।’

‘আমাদের কাঁঠাল ক্রেতার ৮০ শতাংশই চর থেকে আসা মানুষ’ বলেন তিনি।

কাঁঠালে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিগুণের বিষয়ে লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে, ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে। কাঁঠালে সামান্য পরিমাণ প্রোটিনও পাওয়া যায়।’

‘প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে ১ দশমিক ৮ গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম ও কাঁঠালের বীজে ৬ দশমিক ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়’ উল্লেক করে তিনি বলেন, ‘এই প্রোটিন দেহের গঠনে সাহায্য করে।’

কাঁঠালে রয়েছে শ্বেতসার। পাকা কাঁঠালে ০ দশমিক ১ গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ০ দশমিক ৩ ও কাঁঠালের বীজে ০ দশমিক ৪ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায় বলেও জানান সিভিল সার্জন।

Comments

The Daily Star  | English

Israel will take all of Gaza: PM

Strikes kill 52 more; WHO chief says 2 million 'starving'

7h ago