বন্যায় তলিয়ে গেছে গবাদিপশুর আবাসস্থল, গো-খাদ্যের তীব্র সংকট
সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিত কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা গ্রামের দরিদ্র কৃষক রেজাউল করিমের ঘর দুই মাস আগেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার ভয়াবহতা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে জুনের মাঝামাঝিতে গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তবে, শুধু পরিবারের চার জন নয়, ১০ ফিটের একটি ছোট্ট ঝুপড়িতে পরিবারের চার জনের পাশাপাশি রয়েছে তিনটি গরুও। নিজেরা দুবেলা না খেতে পেলেও গবাদিপশুগুলোকে তিন বেলা খাওয়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন রেজাউল ও তার পরিবার।
শুধু রেজাউল নয়, সিরাজগঞ্জের প্রায় লক্ষাধিক গো-খামারির এখন একই অবস্থা। টানা প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্যাকবলিত রয়েছে সিরাজগঞ্জের ছয়টি উপজেলা। বন্যায় তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি, গবাদিপশুর আবাসস্থল, খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ গবাদিপশু (গরু, ছাগল, ভেড়া)। বন্যার কারণে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আনেকেই গবাদিপশু বিক্রি করে দিয়েছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও গবাদি পশু পালনে সংকট কাটছে না দেশের অন্যতম প্রধান গবাদিপশু পালনের এ অঞ্চলে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আখতার-উজ-জামান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে এ বছর প্রায় ১০ লাভ গরু, ৩ লাখ ছাগল ও দেড় লাখ ভেড়া পালন করা হয়েছে। টানা বন্যায় জেলার প্রায় আট হাজার ৫৬২ একর গো-চারণভূমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৭০ মেট্রিক টন কাঁচা ঘাস এবং ৫৮৮ মেট্রিক টন শুকনো খড়। বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট ক্ষণস্থায়ী হবে বলে।’
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গো-খাদ্য সংকটে অধিকাংশ খামারিরাই গবাদিপশু কম দামেই বিক্রি করে ফেলছেন। এতে করে তাদেরকে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চর-রতিকান্দি গ্রামের খামারি নূর নবী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার খামারে চারটি গরু আছে। এ বছর কোরবানির ঈদে গরুগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করলেও দাম না পাওয়ায় বিক্রি হয়নি। চারটি গরুর খাবার জোগাড় করতে তিনি এখন হিমশিম খাচ্ছেন।
বন্যার আগে এক শ টাকায় ১০ আঁটি খড় কিনতে পারলেও এখন সেই টাকায় মাত্র পাঁচ আঁটি খড় কিনতে হচ্ছে। খল ও ভুষির দামও বস্তাপ্রতি এক শ থেকে দুই শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এত দাম দিয়ে খাবার কিনে গরুকে খাওয়াতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে নূর নবী বলেন। গো-খাদ্যর অভাবে অনেক সময় কচুরিপানা আর শাপলা তুলে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলার চর চিথুলিয়া গ্রামের গো-খামারি নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার খামারের ৩০টি গরুর মধ্যে ঈদের আগে ১০টি গরু বিক্রি করে দিয়েছি অনেক কম দামেই। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারের খরচ কমাতে কম দামেই পশুগুলো বিক্রি করতে হয়েছে।’
বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পানিবন্দি এলাকাগুলোতে গবাদিপশুর আবাসস্থলের সংকট প্রকট। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে বাঁধের ওপর অথবা উঁচুস্থানে গাদাগাদি করে গবাদিপশুগুলো রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় গবাদিপশুর নিরাপত্তা নিয়েও অনেকেই শঙ্কিত।
Comments