রাতেই ফিরছেন রায়হান কবির

Raihan Kabir in Airport-1.jpg
কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে রায়হান কবির। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির অবশেষে মুক্ত হয়ে আজ শুক্রবার রাতেই ঢাকার পথে রওনা হবেন। স্থানীয় সময় রাত ১১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি রওনা হবেন। রাত ১টায় তার ঢাকায় নামার কথা। 

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদ সেদেশের সাংবাদিকদের জানান, দেশে পাঠানোর জন্য শুক্রবার রাত ৯টায় রায়হানকে বিমানবন্দরে নেওয়া হবে।

রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় তাকে বিমানে তোলা হবে। এর আগে, করোনার পরীক্ষায় তার নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে। যেহেতু রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশ কোনো অভিযোগ আনেনি, কাজেই তাকে কোনো আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।’

রায়হানের বাবা শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় করে আছি ছেলের জন্য। এই আনন্দ বুঝিয়ে বলতে পারব না।’

করোনা মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত ২৪ জুলাই রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ৬ আগস্ট পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিন মঞ্জুর করেন। বুধবার রিমান্ড শেষ হওয়ার পর পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এরপরেই ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠোনোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় তার বিমানের টিকিট করা হয়। শুক্রবার সকালে রায়হানকে জানানো হয়, রাতেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগেই রায়হানের লাগেজসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সেখানে আনা হয়।

গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে।

সেখানে দেখানো হয়েছে, কর্মহীন ও খাবারের সংকটে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আল-জাজিরার ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনে মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন রায়হান কবির। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে। ২৪ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের ২১টি সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে।

রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির নিন্দা জানিয়েছিল মালয়েশিয়ার আইনজীবীদের সংগঠন ল’ ইয়ারস ফর লিবার্টি-এলএফএল। তারা বলেছে, রায়হানের বিপক্ষে যেভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিপীড়নমূলক। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে রায়হানের বক্তব্যটি তারা দেখেছেন। সেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার করলেও মালয়েশিয়ার আইনের কোনোরকম লঙ্ঘন ঘটেনি। এখানে কেবল অভিবাসীদের ওপর দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন রায়হান।

গ্রেপ্তারের আগে রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে এক বার্তায় বলেন, ‘আমার অপরাধটা কী? আমি তো কোনো মিথ্যা বলিনি। প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, আমি শুধু সেই কথাগুলো বলেছি। আমি চাই প্রবাসে থাকা কোটি বাংলাদেশি ভালো থাকুক। আমি চাই পুরো বাংলাদেশ আমার পাশে থাকুক।’

পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান বার বার বলেন, ‘কোভিড-১৯ চলাকালে প্রবাসীদের প্রতি যে আচরণ তিনি দেখেছেন, সেটাই তিনি বলেছেন এবং এগুলো তার একান্তই নিজস্ব অনুভূতি। তবে মালয়েশিয়ার কাউকে তিনি আহত করতে চাননি।’

রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন তিনি। সবার বিপদে পাশে থাকতেন।

শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার

Comments

The Daily Star  | English
problems faced by Bangladeshi passport holders

The sorry state of our green passports

Bangladeshi passports are ranked among the weakest in the world.

5h ago