হাতিয়ার ১১ ইউনিয়ন প্লাবিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণ, অমাবস্যা ও বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের কারণে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে, এ দ্বীপাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণ, অমাবস্যা ও বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের কারণে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে, এ দ্বীপাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এসব দুর্গত এলাকায় শনিবার পর্যন্ত কোনো সরকারি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে গবাদি পশু। ভেসে গেছে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি, খামারের মাছ। জরুরি ভিত্তিতে হাতিয়ায় সরকারি ত্রাণ বিতরনের দাবি করেছেন বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়, শরতের শুরু থেকে (১৫ আগস্ট) মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় টানা ছয় দিন ধরে নোয়াখালীতে থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসের কারণে জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষা দেশের বৃহত্তম উপজেলার (২ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন) ১১টি ইউনিয়নের সবকয়টি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ভেসে গেছে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি, খামারের মাছ। ছবি: সংগৃহীত

হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরকিং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘গত ৫-৬ দিনের টানা বর্ষণ ও অমাবস্যার কারণে হাতিয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ার আসার কারণে নিঝুম দ্বীপ, চর ঈশ্বর, সুখ চর, তমরুদ্দি, নলচিরা, কেরিংচর, হরনী ও চানন্দি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়া

জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় বন্যা দেখা দিয়েছে।’

তমরুদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান ফররুখ আহম্মেদ ফারুক বলেন, ‘১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের পর এমন বন্যা আর দেখিনি। আমার ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ৭-৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।’

শনিবার পর্যন্ত তার এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌছায়নি। জরুরিভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

৫-৬ দিনের টানা বর্ষণ ও অমাবস্যার কারণে হাতিয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৫৭ হাজার লোক ১ সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি আছেন। এ ইউনিয়নে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় জোয়রের পানি অতি সহজেই প্রবেশ করে বসতঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। আগামী শুকনো মৌসুমে নিঝুম দ্বীপে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘অস্বাভাবিক জোয়ার ও টানা বর্ষণে উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। কোথাও কোথাও বেড়ি বাঁধ ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জিহাদুল হাসান বলেন, ‘জোয়ার ও নদীর স্রোতে হাতিয়া উপকূলের কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৪০ মেট্রিকটন জি. আর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খাঁন বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিন্মাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শনিবার সকাল থেকে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছি। বন্যার্তদের জন্য ৪০ মেট্রিকটন ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago