পাবনায় ধান-চাল সংগ্রহ: নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ না হওয়ার শঙ্কা
সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ আগস্ট। তবে সরকারিভাবে পাবনায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পরিমাণ ধান-চাল এখনো সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। সরকারের সাথে চুক্তি করার পরও অধিকাংশ মিল মালিকই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করায় সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানায় খাদ্য বিভাগ।
এদিকে, চালকল মালিকদের দাবি, বাজারদরের চেয়ে সরকারি ক্রয় মূল্য কম হওয়ায় চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে, পাবনা জেলার নয়টি উপজেলায় ১১ টি ক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৪৫৭১ মেট্রিক টন চাল এবং ৬৬৯৫ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। পাবনায় আনুষ্ঠানিকভাবে গত ৭ মে ক্রয় অভিযান শুরু হয়। সরকারিভাবে প্রতি কেজি চালের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে ৩৬ টাকা এবং প্রতি কেজি ধানের ক্রয়মূল্য ২৬ টাকা।
ক্রয় অভিযান শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট, তবে এখন পর্যন্ত পাবনায় ৯৮০০ মেট্রিক টন চাল কিনতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। জেলার সবচেয়ে বড় বোরো চালের মোকাম ঈশ্বরদীতে সর্বাধিক ১৫১৬২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তবে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬৪০২ মেট্রিক টন চাল।
সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চাল ক্রয়ের জন্য খাদ্য বিভাগ এ বছর জেলার ৬৮২ টি চাল কলের সাথে ক্রয় চুক্তি করে। তবে চুক্তি করলেও অধিকাংশ চাল কল মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে নির্দিষ্ট সময়ে চাল সরবরাহ না করায় সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পরিমাণও সংগ্রহ করা যাবে না বলে জানান জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
চুক্তি করা ৬৮২ টি চাল কলের মধ্যে প্রায় ২০০টি মিল এ পর্যন্ত চাল সরবরাহ করেনি, বাকি মিলগুলো চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছে না বলেও জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
তিনি বলেন, যে সব মিল সরকারের সাথে চুক্তি করার পরও চুক্তি ভঙ্গ করে চাল সরবরাহ করেনি তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, সরকারি নির্দেশনা পেলেই সে সব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার জন্য খাদ্য বিভাগ মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করলেও চাল কল মালিকরা দাবি করেন সরকারি ক্রয়মূল্য কম হওয়ায় মিল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে পারছে না। পাবনা জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমান মালিথা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৪০ টাকা কেজি, কিন্তু সরকারি ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ টাকা। বাজার মূল্য বেশি থাকায় অধিকাংশ মিল মালিকরাই সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল সরবরাহ করছে না।
তিনি দাবি করেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে। প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। বর্ধিত মূল্যে ধান কিনে চাল প্রস্তুত করতে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন মূল্য পড়ছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। এ অবস্থায় সরকারের কাছে বার বার ক্রয় মূল্য বাড়ানোর জন্য চালকল মালিকরা দাবি করে আসলেও সরকারি ক্রয় মূল্য বাড়ানো হয়নি ফলে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে লোকসান দিয়ে অনেকেই চাল সরবরাহ করতে রাজি না হওয়ায় চুক্তি করার পরও আনেক মিলি মালিক চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেনি।
এদিকে বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষকরাও সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান সরবরাহ করছে না বলে জানান কৃষকরা। পাবনা সদর উপজেলার কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, সরকারিভাবে প্রতিকেজি ধানের দাম ধরা হয়েছে ২৬ টাকা, সে হিসেবে প্রতিমণ ধানের দাম ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাজাওে এখন কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকায়। উপরন্তু সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান সরবরাহ করতে হলে শুকনা ধান দিতে হয় যার দাম আরও বেশি। এসব কারণেই কৃষকরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে আসছে না বলে জানান সালাম।
এদিকে, বাজার মূল্যের অজুহাতে বোরো সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে জানিয়ে খাদ্য কর্মকর্তারা সংকটকালীন এ সময়ে সরকারের আপৎকালীন খাদ্য মজুতের জন্য চাল আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন।
Comments