পিএসজিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বায়ার্ন মিউনিখকে এগিয়ে দিলেন কিংসলে কোমান। অনেক চেষ্টা করেও গোল শোধ দিতে পারল না নেইমার-কিলিয়ান এমবাপের প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার। ওই এক গোলই গড়ে দিলো ম্যাচের ভাগ্য। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতল হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
রবিবার রাতে লিসবনের স্তাদিও দা লুজে ইউরোপের সেরা ক্লাব আসরের ফাইনালে পিএসজিকে ১-০ গোল হারিয়েছে বায়ার্ন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্নের এটি ষষ্ঠ শিরোপা। এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্লাবগুলোর তালিকায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে উঠে এলো দলটি। সমান সংখ্যক শিরোপা আছে লিভারপুলেরও। প্রথম দুটি স্থান যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ (১৩) ও এসি মিলানের (৭) দখলে।
দ্বিতীয়বারের মতো ‘ট্রেবল’ জেতার স্বাদ পেল বাভারিয়ানরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ উঁচিয়ে ধরার আগে ২০১৯-২০ মৌসুমের বুন্ডেসলিগা ও জার্মান কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা। এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে তিনটি প্রতিযোগিতাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে সবকটিতে জেতার কৃতিত্ব দেখাল বায়ার্ন। সবমিলিয়ে তারা গোল করেছে ৪৩টি। তবে আগের দশ ম্যাচে টানা জাল খুঁজে নিলেও ফাইনালে নিশানা ভেদ করতে পারেননি দলটির তারকা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডভস্কি। প্রথমবার ফাইনালে ওঠা পিএসজির নেইমার আর এমবাপেও ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে।
দুই পরাশক্তির লড়াই। তারকার ছড়াছড়ি। তবে ফাইনালের প্রথম মিনিট দশেকে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা তেমন ছড়ায়নি। এসময় বল দখলে সমতা দেখিয়েছে দুই পক্ষই।
ম্যাচের প্রথম ভালো আক্রমণটি করে পিএসজি। ১৪তম মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে বায়ার্নের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে। গোলমুখে শটও নিয়েছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। কিন্তু তা ব্লক করেন লিওন গোরেৎজকা। দুই মিনিট পর একই কায়দায় এমবাপের আরেকটি প্রচেষ্টা ভেস্তে দেন জশুয়া কিমিচ।
এরপর খেলায় যেন প্রাণের সঞ্চার হয়। পাঁচ মিনিট পর গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল পিএসজি। তবে দুই দফা দুর্দান্ত সেভে বায়ার্নকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার।
ফের বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছিল প্যারিসিয়ানরা। এমবাপের বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গড়ানো শট নিয়েছিলেন নেইমার। লক্ষ্য ছিল নয়্যারের দুই পায়ের নিচে দিয়ে বল জালে পাঠানো। কিন্তু পা দিয়ে দারুণভাবে বল ঠেকিয়ে দেন এই জার্মান গোলরক্ষক।
বাইলাইনের কাছ থেকে আবার গোলমুখে বল ফেলার চেষ্টা করেছিলেন নেইমার। তবে সেবারও তাকে হতাশ করেন নয়্যার।
প্রতিপক্ষের টানা আক্রমণের ধাক্কা সামলে এরপর নিজেদের ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে শুরু করে বায়ার্ন। প্রথমার্ধের বাকি অংশে অধিকাংশ সময়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখে তারা। বিপরীতে পাল্টা আক্রমণ নির্ভর কৌশল গ্রহণ করে পিএসজি।
২২তম মিনিটে ভাগ্যের সহায়তা না পাওয়ায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি বায়ার্নের। ডি-বক্সের ভেতর থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে শট নিয়েছিলেন গোলমেশিন রবার্ট লেভানডভস্কি। তার প্রচেষ্টা পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে ফাঁকি দিলেও বাধা পায় পোস্টে।
দুই মিনিট পর অ্যান্দার হেরেরার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ভালো অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন অ্যাঙ্গেল দি মারিয়া। কিন্তু ১০ গজ দূর থেকে তার ডান পায়ে নেওয়া শট বায়ার্নের পোস্টের অনেক উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩০তম মিনিটে নেইমারের ফ্রিক-কিক কয়েক মাথা ঘুরে পেয়ে যান হেরেরা। ২০ গজ দূর থেকে তার নেওয়া শট প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়।
দুই মিনিট পর সার্জ ন্যাব্রির ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন লেভানডভস্কি। গোলবারের নিচে নাভাসও ছিলেন প্রস্তুত। বল রুখে দেন অসাধারণ দক্ষতায়। বিরতির ঠিক আগে সমতায় ফেরার ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিল পিএসজি। কিন্তু সরাসরি নয়্যারের বরাবর শট মেরে তা নষ্ট করে দলটি।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও গোছানো খেলা উপহার দেয় বায়ার্ন। চোখ ধাঁধানো আক্রমণে ৬০তম মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ডান প্রান্ত থেকে কিমিচের ক্রসে ডি-বক্সের ভেতর থেকে মাথা ছুঁইয়ে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ফরাসি ফরোয়ার্ড কোমান।
দুই মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত বায়ার্ন। তবে কোমানের ক্রস রুখে দেন পিএসজি ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা।
এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে শিরোপার লড়াই। ৭০তম মিনিটে দি মারিয়ার পাসে কাছের পোস্টে নেওয়া মার্কুইনহোসের দুর্বল শট অনায়াসে পা দিয়ে রুখে দেন নয়্যার।
বদলি নামা এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিং শেষদিকে পেয়েছিলেন সমতায় ফেরানোর ভালো দুটি সুযোগ।। কিন্তু একবারও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। তাতে হারের ক্ষত নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় টমাস টুখেলে দলকে।
Comments