প্রদীপের অবৈধ আয় বৈধ করতেন তার স্ত্রী: দুদক প্রতিবেদন

টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ছবি: সংগৃহীত

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালীন সময় ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন প্রদীপ কুমার দাশ। আর সেই অর্থ সরকারের চোখে বৈধ করার দায়িত্ব ছিল তার স্ত্রী চুমকি করনের ওপর।

তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করে এমনটিই জানতে পেরেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কমিটি।

দুদক তদন্ত কমিটি তাদের তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খোঁজ পেয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে প্রদীপ ও চুমকির নামে মামলা দায়ের করেছেন দুদক সহকারী পরিচালক পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।

কমিশন তদন্তটি শুরু করে ২০১৮ সালে। প্রদীপ ও চুমকিকে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হলেও চুমকি তা জমা দেন ২০১৯ সালের ১২ মে।

মামলাটি করতে এক বছরেরও বেশি সময় কেন নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ জানান, সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল নথি পরীক্ষা করতে তাদের সময় লেগেছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহাকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার পর প্রদীপকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় গত ৫ আগস্ট। গত ৬ আগস্ট তিনি কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

প্রদীপের স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের একটি অনুলিপি রয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

মামলার বিবৃতি অনুসারে, চুমকি তাদের সম্পদের বিবরণে দেখিয়েছেন যে তার বাবা তাকে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি দিয়েছেন।

দুদকের তদন্তে বেড়িয়ে আসে, চুমকির দুই ভাই থাকলেও তারা বাবার কাছ থেকে তেমন ‘উল্লেখযোগ্য’ সম্পত্তি পাননি।

এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভবনটি তৈরি করেছেন। এবং তা গোপন করার জন্য তিনি এটি তার শ্বশুরের নামে করেছিলেন। তার শ্বশুর সেটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন।

চুমকি একজন গৃহিণী। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিনি প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তখন থেকেই তিনি ব্যবসাকে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার মাছের ব্যবসা ছিল।

২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে তিনি তার মূলধন দেখান ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় দেখান তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা।

চুমকির দাবিকৃত মাছের ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি তদন্তকারী দল। তিনি তার ব্যবসার কোনো লাইসেন্স বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে পারেননি।

একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা নেননি।

২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মাছের ব্যবসায় থেকে দেড় কোটি টাকা উপার্জনের কথা উল্লেখ করেছেন চুমকি। ২০০২ সালে বোয়ালখালীতে পাঁচটি পুকুর দশ বছরের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় লিজ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, তার স্বামী প্রদীপ ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন পুলিশে।

২০০২ সালে মাছ ব্যবসা শুরু করার জন্য বিনিয়োগের ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা কোথায় পেয়েছিলেন সে সম্পর্কে কোনো দলিল দেখাতে পারেননি তিনি।

অভিযোগে লেখা হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয় যে প্রদীপের অজস্র অবৈধ অর্থ গোপন করার জন্যই চুমকি ভুয়া মাছের ব্যবসা দেখিয়েছিলেন। মাছের ব্যবসা থেকে তিনি দেড় কোটি টাকা আয় করেছেন, এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশন আরও জানতে পারে, চুমকির স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টাকার এবং পারিবারিক ব্যয় হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকার। সেখানে তার বৈধ আয় মাত্র ৪৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

সে হিসাবে তিনি জ্ঞাত বহির্ভূত আয় করেছেন তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Private sector sidelined in tariff talks

At a Star roundtable, industry leaders, trade experts slam govt’s handling of negotiations with US

9h ago