‘ধর্ষণের পর হত্যা’ ৫১ দিন পর জীবিত উদ্ধার কিশোরী

নারায়ণগঞ্জে নিখোঁজের ৫১ দিন পর এক স্কুলছাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। যে কিশোরীকে প্রথমে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে তিন যুবক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তবে যুবকদের পরিবারের দাবি, পুলিশ তিন যুবককে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে এ জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে নিখোঁজের ৫১ দিন পর এক স্কুলছাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। যে কিশোরীকে প্রথমে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে তিন যুবক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তবে যুবকদের পরিবারের দাবি, পুলিশ তিন যুবককে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে এ জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছে।

সোমবার সকালে বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার ও তার স্বামী ইকবালকে গ্রেপ্তার করে শহরের সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

ওই কিশোরী বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় বসবাস করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দুপুরে সদর মডেল থানার ওসির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ

সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় ওই কিশোরী। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। মামলার আসামিরা হলেন, বন্দরের খলিলনগর এলাকার মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানী খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান (৩৬)।

মামলার তদন্তে কিশোরীর মায়ের ফোনের কললিস্ট থেকে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ ওই কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। পরে রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই কিশোরীকে নৌকায় করে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা।

এএসপি মোস্তাফিজুর বলেন, ‘আজকে আমরা জানতে পারি ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি।

ঘটনার দিন অভিযুক্ত আব্দুল্লাহর সঙ্গে ওই কিশোরী দেখা করে। পরে ইকবালের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে ওই কিশোরী তার মাকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। আজ সকালে পুলিশ কুশিয়ারা থেকে ওই কিশোরী ও তার স্বামীকে আটক করে।

অভিযুক্তদের দেয়া আদালতে স্বীকারোক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন তারা এ স্বীকারোক্তি দিয়েছে বা অন্য কোন ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছে কিনা এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে পরে জানানো হবে।’

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহর মা শিউলী আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুলিশ সঠিক তদন্ত না করেই আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। পরে রিমান্ডে নিয়ে মারধর করে ধর্ষণ ও হত্যা করার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘রিমান্ডে পুলিশ মারধর করবে না এজন্য ফোন করে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। এজন্য সদর থানার এসআই শামীমকে প্রথমে ৭ হাজার পরে আরও ৩ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও আমার ছেলেকে মারধর করে পুলিশ।’

রকিবের বড় ভাই মো. সজিব বলেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ। ওরে বার বার জিজ্ঞাসা করছি সে বলছে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এরপরও পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে দুই দফা মারধর করেছে। মারধর করেই এ বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘রিমান্ডে মারধর করবে না বলে ২০ হাজার টাকা চায়। পরে দুই দফায় ১০ হাজার টাকা দেই। পরে আবার ভাইকে ছেড়ে দেবে বলে আরও ২০ হাজার টাকা নেয় এসআই শামীম।’

খলিলের স্ত্রী শারমিন বলেন, ‘২০ হাজার টাকা দাবি করে এসআই শামীম। মারধর করবে না বলে ৬ হাজার টাকা নেয়। মারধর করে এ বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

অভিযুক্তদের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। যদি পুলিশ অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রিমান্ডে এনে মারধর ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।  

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘স্বীকারোক্তি দিয়েছে আদালতে, পুলিশের কাছে না। কেন মিথ্যা বললো সেটা জানা নেই। এমনও হতে পারে আগের কোন ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। মারধরে অভিযোগ মিথ্যা। টাকা নিয়ে থাকলে তদন্ত হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka luxury hotels see decline in clients

Luxury hotels fall silent as business travellers fade away

Luxury hotels in Dhaka are yet to resume normal business activities as foreign and local clients do not feel confident in travelling to the country given that the overall situation is still unstable.

16h ago