নজিরবিহীন সংকটে সংবাদপত্র শিল্প, সহযোগিতা কামনা সম্পাদক পরিষদের

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সংবাদপত্র শিল্প এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্র জগতে এই নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পাশাপাশি পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও হকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সংবাদপত্র শিল্প এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্র জগতে এই নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পাশাপাশি পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও হকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

এই শিল্পে দুর্দিনে কথা তুলে ধরে দেশের প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকের সংগঠনটি আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, পত্রিকাগুলো টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করছে। পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় সংকোচ করেও এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

এমন অবস্থা বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে আগে কখনো আসেনি উল্লেখ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘সংবাদপত্রের পাঠক ও পত্রিকা প্রচার সংখ্যা কমে গেছে। বিজ্ঞাপন ও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। …এমন অবস্থাতেও সকল প্রতিকূলতা সামলে আমরা পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছি। পাঠকদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হতে দিইনি।

সংবাদপত্র শিল্প সরকারের কোন ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ার ব্যাপারে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘বাংলাদেশে সংবাদপত্র একটি সেবা শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। এর প্রথম লক্ষ্য বৃহত্তর পরিসরে দেশ ও জনগণের সেবা করা। কিন্তু এই লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন সাহায্য ও সহযোগিতা সংবাদপত্র শিল্প কখনো পায়নি। সেবা শিল্প তো নয়ই, মুনাফামুখী সাধারণ শিল্পগুলো যে সহযোগিতা পায় সংবাদপত্র শিল্প তা থেকেও বঞ্চিত। এই সকল অবস্থা বিবেচনা করে সংবাদপত্রগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে, দাবি-দাওয়া পেশ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে সরকারের তরফ থেকে কখনো তা আমলে নেওয়া হয়নি। বরং দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা শিল্পের প্রতি উদাসীনতা ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।’

সম্পাদক পরিষদ আরও বলেছে, করোনাকালে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সংবাদকর্মীরা কর্তব্য পালন করে জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে যাচ্ছেন। নানাবিধ চাপ ও হুমকি মাথায় নিয়ে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সংবাদ কর্মীরা সেলফ সেন্সরশিপ অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যা একটি সুস্থ ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ও সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক।

‘সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশের যত্রতত্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি বেড়ে গেছে আশংকাজনক হারে। আর এর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের আলাদা কোন রক্ষাকবচ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সেখানে এর বিপরীতে এমন নেতিবাচক আইনি পরিস্থিতিতে ডিজিটাল আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন অতি জরুরি বলে আমরা মনে করি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অনলাইনে সংবাদ সরবরাহের জন্য সংবাদপত্রগুলোর আলাদা সরকারি অনুমোদন লাগবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত আমরা মনে করি যে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর যেমন অনলাইন সংবাদ সরবরাহের জন্য আলাদা করে কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না, সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও তেমন হওয়া যৌক্তিক। কারণ সংবাদপত্রগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের মতই সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ হয়। এরকমই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর যৌথ সভায়। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর প্রথম দফায় নিবন্ধনের জন্য ৩৪টি নিউজ পোর্টালের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি এই তালিকায় দেশের পরিচিত, প্রধান ও গ্রহণযোগ্য সংবাদপত্রগুলোর পোর্টালের নাম নেই। আমরা এই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে দ্রুত ও যৌক্তিক সমাধান আশা করি।’

Comments