খাদ্য সংকটে ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার ভাঙনে বাস্তুহারা শতাধিক মানুষ

Kurigram_Ramna_25Aug20.jpg
খাদ্য সংকটে পড়েছেন কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ভাঙনকবলিত শতাধিক মানুষ। ছবি: স্টার

‘হামার বাস্তুভিটা খ্যায়া ফ্যালাইছে ব্রহ্মপুত্র। অ্যালা হামরা বান্ধের রাস্তার উপরত আছং। ভাতও জোটে না দুই বেলা’— কথাগুলো বলছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বাস্তুহারা সখিনা বেগম। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকায়।

তিনি আরও বলেন, ‘হামার সোকগুলা জমাজমি নদের গর্ভে চলে গ্যাছে। হামার অ্যালা কোনো জমি নাই। মোর সওয়ামি ভ্যান গাড়ি চালায় অ্যালা। ছওয়া-পোয়াক ঠেকঠাক খাবার দিবার পাবার নাগছোং না। মোর সওয়ামির কামাইও তেমন নাই।’

সখিনার স্বামী সাদেকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনার কারণে তাদের রোজগার কমে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদি বন্যার কারণে ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এরপর ভাঙনে সব হারিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে। জমি কেনার সামর্থ্য নেই তাই অপেক্ষায় আছেন কবে চর জাগবে, কবে জমি ফিরে পাবেন।

তিনি বলেন, ‘অ্যালা ভ্যান চালায় কোনো মতে এক শ থেকে দেড় শ টাকা ইনকাম করবার নাগছোং। কিন্তু এই টাকা দিয়া পাঁচ জনের সংসার চালবার পাবার নাগছোং না। এক বেলা খাই তো আরেক বেলা না খ্যায়া থাকবার নাগছোং।’

এই গ্রামের ভাঙনকবলিত পরিবারের আট বছর বয়সী শিশু মিলন ইসলাম। বাঁধের ওপর পলিথিনের ঝুঁপড়ি ঘরে বাবা-মায়ের সাথে থাকছে। মিলন বলে, ‘হামার খুব কষ্ট। হামার খাবার নাই, জামা নাই। হামার পেটোত ভোগ নাগি থাকে।’

ধরলার ভাঙনে বাড়ি-জমি সব হারিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের খোরশেদ আলম সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হামারগুলা কষ্টের শ্যাষ নাই। নাই খাবার, নাই থাকার জাগা। হামরাগুলা অ্যালা কোনটে যাই?’

তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন। পরিবার নিয়ে এখন তার রাত কাটছে বাঁধের ওপর। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। তিনি বলেন, ‘আট জনের সংসার নিয়া মুই যে অবস্থাত আছোং সেটা কয়া শ্যাষ করবার পাবার নং। মোর বুক ফাঁটি যাবার নাগচে। চোখের সামনোত বসতভিটা আবাদি জমি তিস্তাত চলি গ্যাইছে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের তিস্তার ভাঙনকবলিত কোদেজা বেওয়া (৬৩) বলেন, ‘আংগো এহোন কিছু নাইকা। বাস্তুভিটা, ফসলি জমি ব্যাকটি ওই তিস্তাত গ্যাছেগা। আংগো আর বাঁইচ্চা থাক্কা লাভ নাই। আংগোরে কষ্টের শ্যাষ নাইকা। আংগো কষ্ট কেডায় দ্যাখবো।’

দুই জেলার পানি উন্নযন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে গত দুই সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীরভাঙনে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বসতভিটা ও কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি নদ-নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুই জেলার প্রায় ১০০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যারা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের প্রাথমিকভাবে ২০ থেকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুই থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত নগদ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। সরকারি খাস জমিতে ঘর তৈরি করে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে।’

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ থেকে ৩০ কেজি করে চাল ও দুই থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত নগদ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা নেওয়া হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

44m ago