পাকিস্তানের উদ্যোগে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় এবার চীন

ইসলামাবাদে তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা। ২৫ আগস্ট ২০২০। ছবি: ডনের সৌজন্যে

চলতি বছরের শুরুতে কাতারের দোহায় তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। প্রতিবেশী আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ও স্বাক্ষরিত চুক্তিকে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান। সেই উদ্যোগের সঙ্গে দেশটি রাখতে চায় এর ‘সব সময়ের বন্ধু’ ও অপর প্রতিবেশী চীনকে।

গত সোমবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি আফগান তালেবান নেতাদের সঙ্গে ইসলামাবাদে নির্ধারিত আলোচনার আগে ও আফগানিস্তানে চীনের বিশেষ দূত লিউ জিয়ানের পাকিস্তান সফরের প্রাক্কালে চীনকে আমন্ত্রণ জানায় এই আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে।

পাকিস্তান চায়, ইসলামাবাদের উদ্যোগে আফগান শান্তি আলোচনায় তালেবান নেতাদের সঙ্গে থাকুক চীনের নেতারাও।

গত সোমবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে চলমান দীর্ঘ ১৯ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটানোর পথ খুঁজতে উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তালেবান নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় চীনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দোহায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি চুক্তি অনুযায়ী একে অপরের হাতে বন্দি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার তালেবান যোদ্ধা ও এক হাজার সরকারি সেনা হস্তান্তরের কথা থাকলেও এর খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।

গত ৯ আগস্ট আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি ‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের বাধা দূর করা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ ও সবার মঙ্গলের জন্যে’ ৪০০ তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেন।

এরই প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি।

তালেবানদের উপ-প্রধান ও দোহা-ভিত্তিক রাজনৈতিক শাখার পরিচালক মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলার পর কুরেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলার পর আমি আশাবাদী যে সমস্যা থাকার পরও বা চক্রান্তকারীরা সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও শীঘ্রই আমরা শান্তির পথ খুঁজে বের করতে পারবো।’

ডনের প্রতিবেদনে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্যে চীনকে পাকিস্তানের আমন্ত্রণ বিষয়ে কোনো কিছু বলা না হলেও, এ প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানিয়েছে, ‘চীন যে শুধুমাত্র ভারতের ভূখণ্ডের ভেতরেই রয়েছে এমনটি নয়। মনে হচ্ছে, (মহাপ্রাচীরের) দেশটি ভারতকে ঘিরে ফেলছে চারদিক থেকে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ভারতের উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান, উত্তরে নেপাল, পূবে বাংলাদেশ— দক্ষিণ এশিয়ায় চীন শুধু তার প্রভাব বাড়াচ্ছে তাই নয়, বরং এ অঞ্চলে চীন প্রসারিত হচ্ছে এক অভিসম্ভাবি শক্তি হিসেবে।’

পাকিস্তানের উদ্যোগে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় চীনা নেতাদের শাহ মাহমুদ কুরেশির আমন্ত্রণকে ভারতের জন্যে ‘আরেকটি ধাক্কা’ হিসেবে বলা হয়েছে প্রিন্টের প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, ‘দীর্ঘ ১৯ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সাহায্যের জন্যে আফগানিস্তানে চীনের বিশেষ দূত লিউ জিয়ানকে ইসলামাবাদে আমন্ত্রণ জানানোয় গত ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ভারতের আঞ্চলিক অভিলাষ আরেকটি ধাক্কা খেলো।’

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

10h ago