নারায়ণগঞ্জে ‘হত্যার শিকার’ কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার

ধর্ষণ ও হত্যায় তিন যুবকের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শামীম আল মামুন। ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণ ও হত্যায় তিন যুবকের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলমের নির্দেশে এসআই শামীমকে সদর মডেল থানা থেকে মাসদাইর পুলিশ লাইনে যুক্ত করা হয়।

জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এসআই শামীমের বিরুদ্ধে গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড (সংযুক্ত) করা হয়েছে। আর নতুন করে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে।

সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাই বলেন, 'আজকেই আমি সব নথিপত্র পেয়েছি। তদন্ত শেষেই বিস্তারিত বলা যাবে।'

কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন যুবকের পরিবারের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তাদের তিন পরিবারের কাছ থেকে ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপরও রিমান্ডে নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করেন।

তদন্তে সময় প্রয়োজন: এএসপি

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এসআই শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) কে এম মোশারফ হোসেন। কিন্তু মামলাটি তদন্ত করবেন পরিদর্শক আব্দুল হাই। আর তাকে আমরা সহযোগিতা করবো।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে প্রথম দিন আমরা কিশোরী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে শীতলক্ষ্যা নদীর যে ঘটনাস্থল সেখানেও পরিদর্শন করেছি। তদন্ত চলছে। এ তদন্তের স্বার্থে আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এর জন্য সময় প্রয়োজন।’

এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নির্দেশে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তিন সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়। যে কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

‘আমার ছেলে যদি হত্যা করে থাকে তাহলে, জীবিত কেমন করে এলো?’

কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ’র বাবা আমজাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ছেলে যদি হত্যা করে থাকে তাহলে এখন কোথা থেকে এলো?

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না এমনকি আগে দেখিও নাই। আমরাও জানি না কিভাবে ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। ওই কিশোরী সাংবাদিকদের বলেছে, আব্দুল্লাহর সঙ্গে মোবাইলে কথায় পরিচয় ও বন্ধুত্ব।’

আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেছি কেন সে মারছে। শুরু থেকে আমার ছেলে বলছে সে কিছু করে নাই। রিমান্ডে নিয়ে মারধর করে, ভয় দেখায়ে এ স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।’

কিশোরীর বাবা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যেভাবে সমাধান করা যায়। যাতে ওরাও বেঁচে যায় আর আমরাও বাঁচি।’

তিনি বলেন, ‘আমি তো জানতাম না আমার মেয়ে কোথায় আছে। কোন ষড়যন্ত্র না। ফোন নাম্বার মোবাইলে সেভ করলে ইমুতে রাকিবের ছবি ও নাম পেয়ে তাদের সঙ্গে প্রথম কথা বলি। পরে তাদের নামে মামলা করি। এখন আইনিভাবে যেভাবে হয় সেইভাবেই যেতে হবে।’

প্রসঙ্গত গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় ওই কিশোরী। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। পরদিন ওই মামলায় পুলিশ বন্দরের খলিলনগর এলাকার মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানী খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুল ছাত্রীকে নৌকায় ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা। বর্তমানে তিন জন কারাগারে রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানত পারি ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত আব্দুল্লাহার সঙ্গে ওই কিশোরী দেখা করে। পরে ইকবাল নামেএকজনের সঙ্গে চলে যায়।  দুইজন বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে। গত ২৩ আগস্ট ওই কিশোরী তার মাকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। পরে সকালে পুলিশ কুশিয়ারা থেকে কিশোরী ও তার স্বামীকে আটক করে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago