‘চীন ভারতকে ঘিরে ফেলছে চারদিক থেকে!’

Modi and Jinping
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। ছবি: ফাইল ফটো

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উপস্থিতি দীর্ঘ দিনের। ‘সব সময়ের বন্ধু’ পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতার কথা সর্বজন বিদিত। এরপর, সাম্প্রতিককালে চীনের সরব উপস্থিতি দেখা যায় শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে।

আঞ্চলিক অভিলাষ ও সীমানা বিরোধের জেরে চীন-ভারতের ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’ স্লোগানটি ফিকে হয়েছে বহু বছর আগেই। এখন মহাপ্রাচীর আর তাজমহলের দেশ দুটির মধ্যে বৈরীভাব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ, নেপাল ও আফগানিস্তানে চীন প্রভাব বিস্তার করছে ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পে। দরিদ্র এই দেশগুলোতে চীন বিনিয়োগ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ‘সাহায্যের’ জোরেই ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত নেপাল নয়াদিল্লির সঙ্গে জড়িয়েছে সীমানা বিরোধে।

দীর্ঘদিন ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন অমীমাংসিত থাকার প্রেক্ষাপটে এই আন্তর্জাতিক নদীটির বাংলাদেশ অংশে চীন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এমন সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর গত ১৮ আগস্ট নয়াদিল্লি থেকে আকস্মিক সফরে ঢাকায় আসেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। উদ্দেশ্য, প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা।

কিন্তু, সপ্তাহ না ঘুরতেই আবারও অস্বস্তিতে পড়ে ভারত সরকার। গত ২৪ আগস্ট দেশটির চিরবৈরী পাকিস্তানের উদ্যোগে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় চীনকে আমন্ত্রণের সংবাদ আসে। ভারতীয় গণমাধ্যম সেই সংবাদকে তাদের জন্যে ‘দুঃসংবাদ’ হিসেবেই উপস্থাপন করে।

পরদিন ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদন বলা হয়, ‘চীন যে শুধুমাত্র ভারতের ভূখণ্ডের ভেতরেই রয়েছে এমনটি নয়। মনে হচ্ছে, (মহাপ্রাচীরের) দেশটি ভারতকে ঘিরে ফেলছে চারদিক থেকে।’

আরও বলা হয়, ‘ভারতের উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান, উত্তরে নেপাল, পূবে বাংলাদেশ— দক্ষিণ এশিয়ায় চীন শুধু তার প্রভাব বাড়াচ্ছে তাই নয়, বরং এ অঞ্চলে চীন প্রসারিত হচ্ছে এক অভিসম্ভাবি শক্তি হিসেবে।’

যে দক্ষিণ এশিয়া একসময় কম-বেশি ভারতের বলয়ের মধ্যেই ছিল, তা এখন হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগে রয়েছে নয়াদিল্লি— এমন মন্তব্যও করা হয় প্রতিবেদনটিতে। আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কারিশমার ওপর এখন সবকিছু নির্ভর করছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দ্য প্রিন্টের ‘… ইট ডাজ নট গুড ফর ইন্ডিয়া’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বেইজিং ও নয়াদিল্লির সঙ্গে সমান মাপের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চীন বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করছে।

ভারতের আসাম সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণে চীনা ঠিকাদারের টেন্ডার জয়ের পাশাপাশি কক্সবাজারে অত্যাধুনিক নৌঘাঁটি ও পটুয়াখালিতে নতুন নৌঘাঁটি এবং সেসব নৌঘাঁটিকে শক্তিশালী করতে চীনের সামরিক সহযোগিতার কথাও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চীনকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীতে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশের বার্তা

লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলাকে বিশেষ উড়োজাহাজে ঢাকায় পাঠান শান্তি ও বন্ধুত্বের বাণী দিয়ে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের এই শুভেচ্ছাসফর বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলেও দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকায় শ্রিংলার আসা-যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আর ও বলা হয়— অথচ গত জুনে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ১০ চীনা চিকিৎসক ঢাকায় এলে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন তাদের অভ্যর্থনা জানান।

ঢাকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে শ্রিংলাকে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তাদের বৈঠকের কোনো ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে কোনো ব্রিফ করা হয়নি।

প্রতিবেদন মতে, শ্রিংলা ঢাকায় গিয়েছিলেন নীরবে, চলেও আসেন নীরবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt looking to defuse trade tensions with India

Bangladesh does not want any further escalation in tension with India, as the recent retaliatory moves are affecting bilateral trade and both countries’ businesses.

5h ago