যে কৌশলে মানবপাচার করতেন এমপি পাপুল
মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের লেনদেন ও ব্যবসা সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আল কাবাস।
পত্রিকাটি এর আগে এমপি পাপুলের চারটি ক্লিনিং কোম্পানির কথা জানিয়েছে। যার সবকয়টিই শ্রম চুক্তি ও ক্লিনিং শিল্প খাতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
আল কাবাসের হাতে আসা একটি দলিলে দেখা গেছে, পাপুলের একটি কমার্শিয়াল লাইসেন্স আছে যার মাধ্যমে তিনি কুয়েতের যে কোনো ব্যবসা করতে পারেন। ‘জেনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড কনট্র্যাক্টিং’ লাইসেন্স নামে পরিচিত ওই বাণিজ্যিক লাইসেন্সের মাধ্যমে তার কুয়েতে প্রায় সব ধরনের শিল্পে ব্যবসা করার অনুমতি আছে।
এক সূত্রের বরাতে আল ক্বাবাস জানায়, ওই লাইসেন্সের মাধ্যমে কেবল সরকারি ক্লিনিং কন্ট্যাক্ট না বরং নির্মাণ ও বৈদ্যুতিক খাত থেকে শুরু করে কৃষি এমনকি কার রেন্টাল পর্যন্ত অনেকগুলো সরকারি চুক্তির অনুমতি আছে।
এই লাইসেন্সের মাধ্যমেই বাংলদেশি এমপি পাপুল সরকারি চুক্তির আড়ালে কোনো আইনি বাধা ছাড়াই অবৈধভাবে অনেক শ্রমিক আনতে পেরেছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
ক্লিনিংয়ের পাশাপাশি স্বর্ণ ও কার্পেট ব্যবসাতেও নাম লিখিয়েছিলেন পাপুল। এর ফলে, অন্যান্য ব্যবসায়িক লেনদেনের তুলনায় স্বর্ণ ব্যবসার উচ্চমূল্যের কারণে পাপুল কারো চোখে সন্দেহ প্রকাশ না করেই তার অবৈধ পারমিট ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
সূত্রটি জানিয়েছে, বিদেশি শ্রমিক আনার অন্যতম সহজ পদ্ধতি হলো ক্লিনিং কোম্পানির চুক্তি। কিছু সরকারি চুক্তিতে ক্লিনার হিসেবে ওই কোম্পানিগুলোতে ৫০০ জন কর্মচারীর কাজ করার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কেবল ১০০ জন কোম্পানিতে সরাসরি কাজ করেন। বাকিরা সাধারণত নিজের মতো করে কাজ খুঁজে নেন এবং ‘প্রান্তিক শ্রমিক’ হিসেবে কুয়েতে থাকেন।
‘প্রান্তিক শ্রমিক’ শব্দটি অস্থায়ী কর্মসংস্থান বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রান্তিক শ্রমিকরা স্বল্প মজুরিতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করে থাকেন।
কুয়েতে প্রান্তিক শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেই। তারা মূলত যখন যেখানে কাজ পান সেখানেই মজুরির ভিত্তিতে শ্রম দেন।
সম্প্রতি কুয়েতে চাকরি ও উন্নত জীবনযাপনের সম্ভাবনা দেখিয়ে অবৈধ পারমিট ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই ধরা পড়েছেন। সাধারণত ১ হাজার ৫০০ কুয়েতি দিনারের বিনিময়ে এই পারমিট বেচাকেনা হয়।
সাধারণত ক্লিনিং কোম্পানিগুলোর অবৈধ পারমিট ব্যবসায় জড়িত থাকার নজির থাকলেও বাংলদেশি এমপি পাপুল বিভিন্ন কোম্পানিতে অবৈধভাবে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন।
আল ক্বাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ মিলিয়নেরও বেশি কুয়েতি দিনারের বিনিময়ে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে কুয়েতে এনেছেন বাংলাদেশি এমপি শহিদুল।
গত ৮ জুন মানবপাচার, অর্থপাচার ও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পাপুলের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে টাকার বিনিময়ে কুয়েতে আনার অভিযোগ ওঠে। কুয়েতে আনার বিনিময়ে জনপ্রতি প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কুয়েতি দিনার নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
Comments