এখনো অস্ত্রোপচার হয়নি খুলনার গুলিবিদ্ধ শিশু লামিয়ার

‘আমার মেয়েটা সারারাত ঘুমোতে পারেনি। ওর কিছু হলে আমি কী করে বাঁচবো? আমার এই মেয়ের মুখের দিকে চেয়েই তো আমি বেঁচে আছি’— কাঁদতে কাঁদতে এই কথাগুলো বললেন খুলনায় গুলিবিদ্ধ হওয়া শিশু লামিয়া আক্তারের (১৫) মা রেশমা মোল্লা।
Khulna Map
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

‘আমার মেয়েটা সারারাত ঘুমোতে পারেনি। ওর কিছু হলে আমি কী করে বাঁচবো? আমার এই মেয়ের মুখের দিকে চেয়েই তো আমি বেঁচে আছি’— কাঁদতে কাঁদতে এই কথাগুলো বললেন খুলনায় গুলিবিদ্ধ হওয়া শিশু লামিয়া আক্তারের (১৫) মা রেশমা মোল্লা।

আজ শনিবার বেলা ১২টার দিকে তিনি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা হচ্ছিলে রেশমার। লামিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় ২৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত গুলি বের করার কোনো উদ্যোগ নেই খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের।

রেশমা বলেন, ‘আমার এক ভাবী, আর এক আত্মীয়ও আমাদের সঙ্গে গত রাতে হাসপাতালে ছিল। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছিল আমার।’

খুলনার ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার। গতকাল বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হলেও আজ বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হয়নি তার অস্ত্রোপচার। লামিয়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে আছে।

গতকাল খুলনা সদর খানার অধীনস্থ মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের একটি গলির বাসিন্দা ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়িতে চাঁদাবাজরা এসেছিল দাবিকৃত অর্থ নিতে। জোরাজুরির একপর্যায়ে চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে নিজের বৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ইউসুফ। চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে করা ঠিকাদারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় লামিয়ার পায়ে। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

লামিয়া আক্তার মহানগরীর আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে। লামিয়ার নানা হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল গুলি লাগার পর থেকেই ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে লামিয়া। গুলি লাগার স্থানে রক্ত পড়া বন্ধ হলেও দুঃসহ যন্ত্রণায় সারা রাত ঘুমায়নি। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় বড় ডাক্তার না থাকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। গুলি বের করার জন্য বোর্ড বসার কথা ছিল।’

‘একটু আগে কয়েকজন ডাক্তার এসেছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমআরআই করার কথা বলেছেন। আমার এখন খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজে এমআরআই করতে যাচ্ছি। এরপর নাকি ডাক্তাররা অপারেশন করবেন’, বলেন তিনি।

ঠিকাদার কোনো খোঁজ নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে লামিয়ার নানা বলেন, ‘ঘটনার পর ঠিকাদার ইউসুফ আলী তার আত্মীয়-স্বজন পাঠিয়েছিল হাসপাতালে। ঠিকাদার বলেছেন চিকিৎসার সব খরচ তিনি দেবেন। তার এক ভাই সবসময় আমাদের দেখভাল করছেন।’

এ ঘটনায় কোনো মামলা করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব? ঠিকাদার তো ইচ্ছা করে গুলি করেননি। তিনি তো চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে গুলি করেছেন। ঠিকাদার চাইলে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’

তরিকুল নামে লামিয়ার প্রতিবেশী এক মামা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লামিয়ার বয়স যখন এক বছর, তখন তার বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। এরপর থেকে লামিয়ার মা বাবার সংসারে থেকে অন্যের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। আমি সার্বক্ষণিক এদের দেখভাল করছি। দোকান থেকে ওষুধ এনে দেওয়াসহ সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘লামিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২৬ ঘণ্টা হলেও তার গুলি বের করা হয়নি এখনো।’

এ বিষয়ে কথা বলতে খুমেক হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমানকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

খুমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনিরুদ্ধ সরকার সাংবাদিকেদের জানান, লামিয়ার বাম পায়ের ওপরের অংশে (থাই) গুলিটি বিদ্ধ হয়েছে। তবে, এটি হাঁড়ে না লেগে মাংসের মধ্যে ঢুকে আছে। শনিবার তাকে অর্থপেডিক্স চিকিৎসককে দেখানো হবে। এরপর তার পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লামিয়া বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। লামিয়ার জীবনের ঝুঁকি না থাকলেও পায়ের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের নেতা অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘একটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবারে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকবে না, এটা কি ভাবা যায়? একটা শিশুর জীবন নিয়ে এমন অবহেলা সহ্য করা যায় না।’

ঠিকাদার শেখ মো. ইউসুফ আলী জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চার জন অপরিচিত সন্ত্রাসী তার বাসায় গিয়ে অস্ত্রের মুখে চাঁদা দাবি করে। একপর্যায়ে তিনি দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করলে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঠিকাদার শেখ  ইউসুফ আলী চার জন অজ্ঞাতনামা চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তল, অব্যবহৃত ১০ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

খুলনায় স্কুল শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ

Comments