চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫০০ বছরের পুরনো তেঁতুল গাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়লা গ্রামের ৫০০ বছরের বেশি বয়সী একটি তেঁতুল গাছ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজকীয় এই গাছটির আকার যেমন বিশাল, তেমনই উচ্চতাও আশেপাশের অন্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়লা গ্রামের ৫০০ বছরের প্রাচীন তেঁতুল গাছ। ছবি: রবিউল হাসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়লা গ্রামের ৫০০ বছরের বেশি বয়সী একটি তেঁতুল গাছ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজকীয় এই গাছটির আকার যেমন বিশাল, তেমনই উচ্চতাও আশেপাশের অন্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি।

তবে ২০০৩ সালের আগেও কেউ জানত না তেঁতুল গাছটির বয়স কত। ওই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করান এবং বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। তারপর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এর দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন এবং গাছটির যাতে কোনো ক্ষতি করা না হয় সেজন্য জনসচেতনতামূলক একটি বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাযহারুল ইসলাম তরু জানান, তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক তেঁতুল গাছটি সম্পর্কে জানতে পেরে আমাকে দেখে আসার জন্য বলেন। আমি সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলি এবং তেঁতুল গাছটি দেখে এসে তাকে জানাই। এরপর তিনি কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে তাদের বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার পর এটি ৫০০ বছরের প্রাচীন গাছ বলে তাদের মত দেন। তারপর এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ছবি: রবিউল হাসান

শুড়লা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২৪ কি. মি দূরে, নাচোলের নেজামপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছর তেঁতুল গাছটি দেখতে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই আসেন। 

কথা হয় শুড়লা গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, বয়স্করা তাদের দাদার কাছ থেকেও গল্প শুনেছেন গাছটি তারাও ওই রকমই দেখেছে। প্রাচীন এই গাছটিকে ঘিরে পূজা করে স্থানীয় কয়েকটি হিন্দু পরিবার। আগে গাছটি আরও উঁচু ছিল। তবে ২০০০ সালের পর গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটি ভেঙ্গে পড়ে। এখন বিশাল কান্ড নিয়ে যে গাছটি দাঁড়িয়ে আছে তাও আশেপাশের অন্য গাছের তুলনায় উঁচু এবং গ্রামে ঢুকতেই দূর থেকে দেখা যায় তেঁতুল গাছটি।

এখনো এই গাছে নিয়মিত ফুল আসে, ফল ধরে। তেঁতুল গাছে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে কয়েকশ বক বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। কয়েক দশক ধরে বক এভাবেই এখানে নিরাপদে পুরো প্রজননকাল কাটায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এখনও কিছু বক বাচ্চাসহ আছে। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে প্রচুর বক ছিল। বাচ্চাবড় হয়ে গেলে সেগুলো উড়ে চলে যায়। তারা বলেন, ৫০০ বছর বয়সী এই মহীরুহ যেমন এলাকার ঐতিহ্যের ধারক তেমনই সম্পদও। তাই এই গাছটিকে রক্ষায়, কেউ কোন ক্ষতি করে না।

ছবি: রবিউল হাসান

তারা জানান, জেলা প্রশাসন উপরে টিনসেডদিয়ে গোল করে বসার জন্য সিমেন্ট দিয়ে বেঞ্চের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে দূর থেকে আসা লোকজন খানিকটা বিশ্রাম নিতে পারেন। এছাড়া গাছের গোড়াও বাধিয়ে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য নেচার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ’র সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ বলেন, গাছ বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয়, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে, মাটির ক্ষয় রোধ ও উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে, বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীদের খাদ্য, আশ্রয় ও বিভিন্ন জীবজন্তুর খাদ্য জোগান দেয়। একটি প্রাচীন বৃক্ষকে ঘিরে বাস্তু সংস্থান তৈরি হয়। সে কারণে পরিবেশে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টাররজার্ম প্লাজম অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রাচীন এই তেঁতুল গাছটি জৈবিক ও পরিবেশগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই তেঁতুল গাছ নয় সব প্রাচীন বৃক্ষই রক্ষা করা উচিত। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। 

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago