শুধু গানেই বেঁচে আছেন আব্দুল জব্বার
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বাবের তৃতীয় মত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তার সংগীতজীবনের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো পাঠকদের কাছে।
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হোন।
১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংগম’ ছবির গানে কণ্ঠ দেন আব্দুল জব্বার। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটি আজো জনপ্রিয়। সেই বছর ‘পীচ ঢালা পথ’ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে ‘পীচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’ এবং ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে ‘সুচরিতা যেওনাকো, আর কিছুক্ষণ থাকো’ গানে কণ্ঠ দেন দিনি।
১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ ছবিতে আলম খানের সুরে ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানটি তাকে এনে দেয় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।
তার অন্য শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো হলো: ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে’, ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’, ‘বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা’, ‘তুমি আছো সবই আছে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’, ‘তোমারা যাদের মানুষ বলো না’, ‘মুখ দেখে ভুল করো না’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক দেশাত্মবোধক গানের গায়ক হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার আয়োজনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নেয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্দুল জব্বার। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের সময় ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বিভিন্নস্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন জব্বার।
বরেণ্য এ শিল্পীর প্লেব্যাক ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘সংগম’ (১৯৬৪), ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ (১৯৬৭), ‘উলঝন’ (১৯৬৭), ‘পীচ ঢালা পথ’ (১৯৬৮), ‘এতটুকু আশা’ (১৯৬৮), ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ (১৯৬৮), ‘ভানুমতি’ (১৯৬৯), ‘ক খ গ ঘ ঙ’ (১৯৭০), ‘দীপ নেভে নাই’ (১৯৭০), ‘বিনিময়’, (১৯৭০), ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), ‘নাচের পুতুল’ (১৯৭১), ‘মানুষের মন’ (১৯৭২), ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’ (১৯৭৩), ‘ঝড়ের পাখি’ (১৯৭৩), ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪), ‘সূর্যগ্রহণ’ (১৯৭৬), ‘তুফান’ (১৯৭৮), ‘অঙ্গার’ (১৯৭৮), ‘সারেং বৌ’ (১৯৭৮), ‘সখী তুমি কার’ (১৯৮০) ও ‘কলমিলতা’ (১৯৮১)।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-আজীবন সম্মাননা (২০১১) ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
Comments