শহর রক্ষা বাঁধেও দুর্ভোগ কমেনি পটুয়াখালী পৌরবাসীর
পটুয়াখালী শহরের পূর্ব পাশে লোহালিয়া নদী, উত্তর দিকে লাউকাঠী নদী, দক্ষিণ দিকে বহালগাছিয়া খাল। বর্ষা মৌসুমে লোহালিয়া আর লাউকাঠী নদীর জোয়ারের পানি সহজেই শহরে প্রবেশ করে। গোটা শহর প্লাবিত হয়ে যায়।
প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। জোয়ারের কবল থেকে শহর রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। ২০০৭-২০০৮ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়ে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে।
এই প্রকল্পের আওতায় ছয়টি স্লুইসগেট, নয়টি কালভার্ট, ১৭টি আউটলেট, ২৫টি ইনলেট, ৯৫০ মিটার পাকা বাঁধ, ২৫০ মিটার ব্যাক ফ্লাড ওয়াল, চারটি গোছলের ঘাটলা এবং এক হাজার ২০০ মিটার মূল বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
বাঁধটি নির্মাণের পর দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না করায়, এটি এখন আর শহরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করতে পারছে না। কয়েকটি জায়গায় বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ করছে। শহরের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে দুই থেকে তিন ফুট পানিতে। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে আসে স্থবিরতা।
অমাবস্যা ও পূর্ণিমার স্ফীত জোয়ারের পানিতে শহরের পোস্ট অফিস সড়ক, রুপালী সিনেমা হল সড়ক, একেএম কলেজ সড়ক, কাঠপট্টি এলাকা, জুবিলী স্কুল সড়ক, এসডিও রোড, বনিক পট্টি, নবাবপাড়া, মহিলা কলেজ সড়ক, নিউ মার্কেট, জুবিলী স্কুল সড়কসহ শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক তলিয়ে যায়।
পোস্ট অফিস সড়ক এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী শাহজাহান আকন বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে সড়ক ডুবে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ক্রেতারা পানি ভেঙ্গে আসতে চায় না। শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলেও জোয়ারের পানি ঠেকানো যাচ্ছে না। বাঁধের স্লুইসগেট দিয়েই পানি শহরে ঢুকছে।’
শহরের নিউমার্কেটের স্লুইসগেটে কপাট না থাকায়, সেটি দিয়ে জোয়ারের পানি মার্কেটে প্রবেশ করেছে।
নিউ মার্কেটের ওষুধ ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, ‘এই পানি ভেঙে ক্রেতারা মার্কেটে প্রবেশ করছেন না। দীর্ঘদিন করোনার কারণে মার্কেট বন্ধ ছিল, এখন জোয়ারের পানির কারণে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। শহর রক্ষা বাঁধও জোয়ারের পানি ঠেকাতে পারছে না।’
শহরের কলেজ রোড সংলগ্ন তালতলা এলাকায় বেড়িবাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। গত কয়েকদিনের অধিক উচ্চতায় জোয়ারের পানি বাঁধ উপচেও শহরের ভিতরে প্রবেশ করেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘জোয়ারের পানি বাড়লে বাঁধের নিচ দিয়ে পানি ঢুকতো। কিন্তু গত পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের পানির বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ উপচে পানি আসছে।’
পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন বলেন, ‘পৌর শহর জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিন সংস্কার কিংবা মেরামত করা হয়নি। কলেজ রোড সংলগ্ন তালতলা এলাকায় বাঁধ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের স্লুইসগেটগুলোও অকেজো হয়ে পরেছে এবং নদীতে চর পরায় জলকপাট এখন আর কাজ করছে না। এ কারণে পৌরবাসী জোয়ারের পানিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। জোয়ারের প্লাবন থেকে পৌরবাসীকে রক্ষায় নতুন করে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে পাউবো, পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘বাঁধের স্লুইসগেটগুলো রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব ওই এলাকার সুবিধাভোগীদের। সুবিধাভোগীরা জানিয়েছে, নদীতে চর পরায় সেগুলো খুলতে-বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কারে একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
Comments