চিনি অবিক্রিত থাকায় ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে ৪ মাস বেতন বন্ধ

৭২৫ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তার মানবেতর জীবন
Thakurgaon Sugar Mills
ছবি: স্টার

গত মৌসুমে উৎপাদিত চিনির সিংহভাগ অবিক্রিত থাকায় তহবিল সংকটের কারণে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের ৭২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের চার মাস বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা।

সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে ৫৪ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি টন চিনির মিল গেটে মূল্য ৬০ হাজার টাকা।

কর্পোরেশনের নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেসরকারি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিয়মিত বেতন হওয়ার কারণে তাদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কারখানার শ্রমিক আব্দুস সামাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চলতি আগস্ট মাসসহ চার মাসের বেতন না পেয়ে দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছি। উপায় না পেয়ে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছি। বেতনের অনেক টাকা সুদের পেছনে গুণতে হবে বলে ঋণগ্রস্ততা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’

কারখানার গাড়িচালক মকবুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় মুদি দোকানদাররাও বাকিতে সদাই দিতে ভরসা পান না। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

মিলের হিসাব বিভাগের কর্মচারী মো. কাজল রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বেতন নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা বলেন চিনি বিক্রি না হওয়ায় বেতন-ভাতা সময়মত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ চিনি শিল্প কর্পোরেশনের মনোনীত ডিলার ইয়াকুব আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বেসরকারি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেজি প্রতি মূল্য ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলের মিল গেট মূল্য কেজি প্রতি ৬০ টাকা হওয়ায় আমরা অল্প পরিমাণে চিনি তুলেছি।’

‘‘বিভিন্ন বেসরকারি শোধনাগার থেকে গ্রাহকরা সাদা চিনি কিনতে পছন্দ করায় বাজারে রাষ্ট্রীয় কলের চিনির চাহিদা কম’ বলে মনে করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও আখ চাষি সমিতির সভাপতি ইউনুস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতি বছর আখ সরবরাহ করার পর আখের মূল্য দিতে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। যথা সময়ে আখের মূল্য পরিষোধের উদ্যোগ নেওয়া হলে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে, এতে মিলও লাভবান হবে।’

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের চিনি বিক্রি করে বেতন দিতে হয়। চিনি বিক্রির গতি খুব ধীর হওয়ায় সময়মতো বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোকে বাঁচাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চিনি তৈরির উপকরণের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়াতে হবে। যাতে করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত চিনির বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চিনি বিক্রি করতে না পারে।’

‘এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার-হাজার পরিবারের জীবন জীবিকা রক্ষা পাবে’ বলেও মনে করেন তিনি।

তার মতে, ‘গত বছরের মতো আমরা যদি সময় মতো চাষিদের টাকা পরিশোধ করতে পারি তবে তারা আখ চাষ অব্যাহত রাখবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মিলটি যথাযথভাবে উত্পাদন চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।’

চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড এলাকার অধীনে কৃষকরা ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ৬৯ হাজার টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আখ চাষ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

BGMEA wants 3-month window from India to clear pending shipments

The association urges the interim government to send a letter to India seeking the opportunity

5h ago