ট্রাম্প না বাইডেন, কার পক্ষে চীন?
যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার ‘চাওয়া-পাওয়া’ ছিল আলোচনার বিষয়। এবারের নির্বাচনে রাশিয়ার পরিবর্তে যেন চীনের ‘চাওয়া’ই হয়ে উঠছে মূল!
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি বিরোধী ডেমোক্রেট দলের জো বাইডেন, কাকে বিজয়ী হিসেবে হোয়াইট হাউসে দেখতে চায় চীন? এতে যুক্তরাষ্ট্রের চীন-নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি?
গতকাল সোমবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এমন প্রশ্ন রাখা হয়।
এতে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় জো বাইডেন হয়তো প্রচলিত কূটনীতির পথে হাঁটবেন। কিন্তু, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে দেশ দুটির মধ্যে বৈরীভাব থেকেই যেতে পারে।
প্রতিবেদন মতে, বেইজিংয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে নিয়ে ‘দ্বিধাবিভক্ত’ রয়ে গেছেন। তারা ভাবছেন, ‘দুই জনের মধ্যে কম খারাপ কে’? আবার অনেকে মনে করছেন, দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক ভালো করার সুযোগ এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
এমন একটা সময় ছিল যখন ট্রাম্প ও বাইডেন দুই জনেই দাবি করতেন যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
কিন্তু, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন তারা তাদের সেই অবস্থান বদলে নিয়েছেন।
এমন সময় চীন নাটকীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়ে সুর নরম করেছে। সেখানকার নির্বাচন-কেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করছে নীরবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করে চীনের ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ পাং ঝোনগিং বলেন, ‘বিজয়ী হয়ে যিনিই হোয়াইট হাউসে আসুক না কেন চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শীতলযুদ্ধের মতো যে পরিস্থিতি চলছে তা দূর করা সম্ভব।’
নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ গু সুর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে চীন সরকারের ‘কম কথা বলার নীতি’ আসলে এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগটাকেই তুলে ধরে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না সেন্টারের সহযোগী জর্জ ম্যাগনুস বলেন, ‘চীন সম্ভত আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিষয়গত নয়, ধরনগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। তারা নির্বাচনটিকে শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ করার বিষয়ে মনস্থির করেছে বলেও মনে হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনার বরাত দিয়ে ট্রাম্প বারবার বলছেন যে বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে বসাতে চায় বেইজিং।
গত মাসে চীনের রাষ্ট্রদূত কুই তিয়ানকাই দেশ দুটির মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান এবং ট্রাম্পের এ ধরনের উদ্বেগ খারিজ করে দেন।
গত ১৩ আগস্ট ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের অনলাইন সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে বসে এখনকার সমস্যাগুলো সমাধান করতে প্রস্তুত। আমরা আজকে বা আগামীকাল যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় বসতে পারি।’
গত সপ্তাহে ‘হোয়াইট হাউসে কাকে দেখতে চায় চীন’ এমন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, আসন্ন নির্বাচনে যদি বাইডেন বিজয়ী হন তাহলে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘নিজের’ করে নিবে। সব আমেরিকানকে চীনা ভাষা শিখতে বাধ্য করা হবে।
ট্রাম্পের এমন দাবির কারণে মনে হতে পারে ডেমোক্রেটরা চীনের প্রতি নমনীয়। তাই তিনি নির্বাচনে জিততে চীন-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদের বিজয়ী হওয়ার জন্যে ট্রাম্পের ১০টি মূল এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে ‘চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো’।
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছেন, চীনের হাত থেকে ১০ লাখ চাকরি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী চীন’কে রুখে দিতে হবে বলেও তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ চালানোর পাশাপাশি চীনা কর্মকর্তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াইসহ বেশ কয়েকটি চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছেন এবং তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছেন।
ট্রাম্পকে নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ বিদ্রুপ করা হয়। অনেকেই তাকে ‘চুয়ান জিয়ানগুও’ বা ‘দেশপ্রেমিক ট্রাম্প’ বলে উপহাস করে থাকেন। করোনা মহামারির প্রসঙ্গ তুলে তারা ট্রাম্পকে প্রায় দুই লাখ আমেরিকানের ‘হত্যাকারী’ হিসেবেও উল্লেখ করছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের জাতীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ওরলিনস বলেন, ‘চীনারা জানেন যে বাইডেন বহু বিষয় নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। হতে পারে সেটা বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার। বাইডেনের এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চীনের অনেকে তাকে ভয়ও পাচ্ছেন।’
Comments