ক্রেন-ফর্কলিফট অকেজো, স্থবির বেনাপোল বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম

বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে ৪০ টন, ৩৫ টন ও ১৯ টনের ক্রেন একটি করে এবং ১০ টনের ক্রেন আছে তিনটি। এর মধ্যে চারটি অকেজো এবং সচল দুটি। ছবি: স্টার

বেনাপোল বন্দরে অধিকাংশ ক্রেন-ফর্কলিফট অকেজো থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম। ব্যাহত হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যসহ বড় বড় প্রকল্পের মালামাল ওঠা-নামা ও ডেলিভারির কাজ। ফলে, বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে স্মরনকালের ভয়াবহ পণ্যজট। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে।

বন্দরে বর্তমানে শেড রয়েছে ৪২টি। এখানে জায়গার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ইকুইপমেন্টের অভাব।

বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে ২৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট রয়েছে একটি ও পাঁচ টনের ফর্কলিফট রয়েছে আটটি। এর মধ্যে চারটি দীর্ঘদিন ধরে অচল। ৪০ টন, ৩৫ টন ও ১৯ টনের ক্রেন একটি করে এবং ১০ টনের ক্রেন আছে তিনটি। এসব ক্রেনের মধ্যে চারটি অকেজো এবং মাত্র দুটি সচল। সে দুটিও মাঝে মধ্যেই মেরামত করে চালাতে হয়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরের গুদামে জায়গার অভাবে আমদানি পণ্য সংরক্ষণে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে আনলোড করতে দেরি হওয়ায় পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি পাওয়া গেলেও ক্রেন বা ফর্কলিফট অকেজো থাকায় তা নামানো যাচ্ছে না। ফলে জায়গা ও ক্রেন সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি হয়। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে লোড-আনলোড করা সম্ভব না। বেশির ভাগ পুরনো ক্রেন ও ফর্কলিফট ভাড়া করে এনে চলছে বন্দরের কাজ। ক্রেন-ফর্কলিফট সংকটের কারণে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ মালামাল বন্দরে ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বন্দরে জায়গা না থাকার পরও প্রায় দুই হাজার ট্রাক আটকে আছে। বন্দরে ক্রেন, ফর্কলিফটের সংকটে সব কাজকর্ম চলছে অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, ‘বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাড়া দিচ্ছে না। বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (ব্যবস্থাপক) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।’

বন্দর ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বন্দরের ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবে অচল করে রাখেন। মাঝে মধ্যে মেরামতের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ কেনা হয়, তা অধিকাংশই পুরনো। ফলে মাস না ঘুরতেই ফের তা অচল হয়ে পড়ে।

বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি ডাইরেক্টর মো. মামুন তরফদার বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে প্রচুর পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়ে আসছে ভারত থেকে। ফলে বন্দরে সৃষ্টি হচ্ছে পণ্যজট। বন্দরে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বন্দরে বিরাজমান সমস্যা অচিরেই সমাধান করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

SC orders EC to restore Jamaat's registration

The Appellate Division of the SC scrapped a High Court verdict that had declared Jamaat's registration with the EC as a political party "illegal"

39m ago