হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের আলাদা অনুমতি নিতে হবে কেন, প্রশ্ন ডা. জাফরুল্লাহর

একটি হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থাপনা থাকতে হয়, যেগুলো অত্যাবশ্যক। প্রাথমিকভাবে এসবের সংস্থান থাকলেই যেকোনো হাসপাতাল সেবাদানের জন্য অনুমোদিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Dr_Zafrullah
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

একটি হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থাপনা থাকতে হয়, যেগুলো অত্যাবশ্যক। প্রাথমিকভাবে এসবের সংস্থান থাকলেই যেকোনো হাসপাতাল সেবাদানের জন্য অনুমোদিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সম্প্রতি সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসায় অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশজুড়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় নিয়োজিত সব হাসপাতাল অনুমোদনপ্রাপ্ত কি না, তা জানা না গেলেও, অনুমোদন নেই উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তাদের আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও প্লাজমা সেন্টার বন্ধ করতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এমনকি প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদাভাবে অনুমোদন না নিয়ে কাজ চালু রাখলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা।

এসব বিষয়ে আজ বুধবার দ্য ডেইলি স্টারের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল চালু করা হয় ১৯৯৪ সালের দিকে। পৃথিবীর সর্বত্র হাসপাতাল বলতে যা বোঝায়, একটি আউটডোর ও একটি ইনডোর এবং রোগী ভর্তি ও রোগীকে বাইরে চিকিৎসাদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থাকতে হবে। এর মানে হলো একইসঙ্গে ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং একটি আল্ট্রাসনোগ্রামভিত্তিক এক্স-রে ব্যবস্থাও থাকতে হবে। ১৯৯৪ সালের দিকে এত সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ছিল না। আমরা যখন হাসপাতালের অনুমোদন নেই, তখন স্বভাবতই এগুলোর জন্য আলাদাভাবে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়েনি।’

‘পরবর্তীতে দেখলাম সরকার নতুন আয়ের ফন্দি এঁটেছে। হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এক্স-রে ও ডেন্টিস্ট্রির জন্য আলাদাভাবে অনুমোদনের নামে নিত্যনতুন ক্ষেত্র খুলে বসেছে। তারপরও সরকার এসব নিয়ম করার পর আমরা যথানিয়মে আবেদন করেছি। তবে এখানে এসে একটি সমস্যা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার আছে তিন হাজারের মতো। হাসপাতাল শুরুর সময় থেকেই ব্লাড ট্রান্সফিউশনের আধুনিক সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ জানতে গেলে তারা বলেছে, এখানে একজন ডিপ্লোমা ডিগ্রিপ্রাপ্ত এমবিবিএস চিকিৎসক থাকতে হবে। আমাদের এখানে বহু চিকিৎসক আছেন, কিন্তু ব্লাড ট্রান্সফিউশনের চিকিৎসক নেই। কারণ সারাদেশে ব্লাড ট্রান্সফিউশনে ডিপ্লোমা ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক আছেন মাত্র ৮০ জনের মতো। তাদের মধ্যে ১০ জন অবসরে চলে গেছেন’, যোগ করেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বার বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আমরা ব্লাড ট্রান্সফিউশনে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী কাউকে নিয়োগ দিতে পারিনি। কারণ চিকিৎসকরা ব্লাড ট্রান্সফিউশনে ডিগ্রি নিতে চান না। এতে অধিক অর্থ উপার্জনের সুযোগ কম। জেলা হাসপাতালগুলোর একটিতেও ব্লাড ট্রান্সফিউশনে ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই। এমনকি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেগুলোতে অর্ধেকও ব্লাড ট্রান্সফিউশনে ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই।’

‘অনেকে হয়ত ভাবছেন, আমরা অনুমোদন নেইনি কেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আমরা গত পাঁচ বছর ধরে যথানিয়মে ফি জমা দিয়ে আবেদন করেছি। প্রতিবারই তারা ফি বাড়িয়ে যাচ্ছে আর বলেছে, আপনারা তো এ মানদণ্ডটি পূরণ করেননি। আমরা প্রতিবারই তাদের জানিয়েছি যে, এটি পূরণ করা সম্ভব নয়। তখন কিন্তু তারা একবারও বলেনি যে, আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে’, যোগ করেন তিনি।

যদিও গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশের কোনো ল্যাবই অনুমতি ছাড়া কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি। তারাও পারবে না। এজন্যই আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলেছি।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের আলাদা অনুমতি নিতে হবে কেন? ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগেরই একটি অংশ হলো প্লাজমা থেরাপি। ব্লাড ট্রান্সফিউশনের অনুমোদন থাকা মানেই হলো ওই বিভাগ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় চিকিৎসা আমরা করতে পারব। তেমনি পিসিআর ল্যাবও বড় ল্যাবরেটরির একটি অংশ। সত্যিকার অর্থেই পিসিআর ল্যাবের জন্য আলাদা অনুমোদনের দরকার থাকা উচিত নয়। প্যাথলজির অনুমোদন থাকা মানেই এসব কিছু করার অনুমোদন আছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা দেশের জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোনো নিয়ম মানে না। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, এবারও আমরা প্লাজমা সেন্টার ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে এ মাসেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছি এবং তাদের জানিয়েছি যে আমরা এ মাসের শেষে পিসিআর ল্যাব চালু করতে যাচ্ছি। তখন তারা এর কোনো উত্তর দেয়নি। পরে সংবাদমাধ্যমে যখন দেখল যে আমরা চালু করে ফেলেছি, তখন আমাদের ফোন দিয়ে আরটি-পিসিআর ল্যাব ও প্লাজমা সেন্টার বন্ধের এবং কাজ চালু রাখলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বলেন, ‘এখানে মূল বিষয়টি হলো, নির্দিষ্ট ফির বাইরে আমরা কোনো অর্থ দেই না। দিতে পারি না। বর্তমানে যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালে এক ব্যাগ প্লাজমা নিতে গেলে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাগে, কিন্তু আমরা দিচ্ছি মাত্র ৫ হাজার টাকায়। অক্সিজেনের সিলিন্ডার লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে ১ হাজার লিটার অক্সিজেনের খরচ পরে মাত্র ৭০ ডলার। সরকার আসলে কোনো ন্যায়-নীতির তোয়াক্কাই করছে না। করোনা মহামারিকালেও দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়ছে। যদিও ১৯৭৯ সালের ওষুধ নীতিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, সরকারকে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

প্লাজমা সেন্টার ও আরটি-পিসিআর’র কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন কি? জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কারও হুমকিতে আমরা ভয় পাই না। আমাদের আশপাশেই অন্তত ৫০টি ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার আছে। তাদের কেউই পুরোপুরি নিয়মাবলী পূরণ করতে পারেনি। তারা বহাল তবিয়তে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কেন বন্ধ করব?’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব করে জনগণের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আচরণ মোটেই সঠিক নয়। তারা অন্যায় করছে। জনসাধারণ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে বিশ্বাস করেন। জনগণের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জনগণের সঙ্গে কোনো অন্যায় কখনো করেনি আর করবেও না। এখন অনুমোদন নেওয়ার কথা বলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করলে, তাতে কার লাভ আর কার ক্ষতি হয়, তা বিবেচনার ভার জনগণের কাছেই রইল।’

আরও পড়ুন:

সহায়তা না করে মোবাইল কোর্টের হুমকি দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: ডা. জাফরুল্লাহ

গণস্বাস্থ্যের প্লাজমা সেন্টার চালু

প্লাজমা দান ও প্লাজমার প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা খোলা গণস্বাস্থ্য

প্রমাণ করেছি যে, মানসিকভাবে আমরা উন্নত না: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আমরা প্লাজমা সেন্টার চালু করতে যাচ্ছি: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভূতের প্রবেশ ঘটেছে’

আমাদেরই সবার আগে এই কিট বিশ্ববাসীর সামনে আনার সুযোগ ছিল: ড. বিজন

গণস্বাস্থ্যের কিট, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেশীয় রাজনীতি

২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago