অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ, মুক্তি চেয়ে ৪৪ নাগরিকের বিবৃতি

৮৩ বাংলাদেশিকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে। ফাইল ফটো

নিপীড়ন, অবমাননা ও প্রতারণার শিকার অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৪৪ নাগরিক।

অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি ভিয়েতনাম ও কাতারফেরত ৮৩ অভিবাসী এবং গত ৪ জুলাই কুয়েত, বাহরাইন ও কাতার থেকে আসা ২১৯ জন অভিবাসীকে পুলিশের আবেদনের পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে জেলে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এই দুটি ঘটনায় রাষ্ট্রকর্তৃক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন অবমাননা করা হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া পুলিশের আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ওইসব দেশের কারাগারে ছিলেন এই অভিবাসীরা। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দেশগুলো বিশেষ বিবেচনায় সাজা মওকুফ করে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে।

‘কিন্তু ভিয়েতনাম থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের সেই দেশের কর্তৃপক্ষ কোন নির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত করেনি বলে আমরা জানি এবং তাদের কেউই জেলে আটক ছিলেন না। বরং তারা পাচারকারী চক্র এবং দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়েছিলেন।’

অভিবাসীরা জানিয়েছেন, ভিয়েতনামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সময়মত পর্যাপ্ত, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভুক্তভোগী অভিবাসীদের প্রশ্ন ছিল, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি কেন তাদের সাথে প্রতারণা করল, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করল এবং বিএমইটি কিসের ভিত্তিতে তাদের ছাড়পত্র দিলো?

নাগরিক বিবৃতিতে প্রতারণার শিকার অভিবাসীদের প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর না দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোয় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

তারা বলেন, গত ৪ জুলাই পুলিশের আবেদনের বক্তব্য, শব্দচয়নও প্রায় একই রকম ছিল। তবে সেখানে যুক্ত করা হয়েছিল, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে এই অভিবাসীরা ‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ করার জন্য সলাপরামর্শ করছিলেন এবং তা পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে। পুলিশ আরও অভিযোগ করে, বিদেশে অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ করেছে এবং তার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পুলিশ আরও জানায়, প্রকৃত দোষী অভিবাসীদের সঠিক নাম, ঠিকানা পাওয়া যায়নি এবং তাদের ছেড়ে দিলে দেশে চুরি-ডাকাতি এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ড বাড়তে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান হলো, কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার একটি অপরাধের জন্য বিচার করা ও শাস্তি দেয়া যায় না। একইসাথে, বিনা পরোয়ানায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। এই সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যধারা শুরু করার ক্ষেত্রে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রাইব্যুনালের জন্য উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। আমরা মনে করি এই দুটি ঘটনায় উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যথেষ্ট ব্যত্যয় ঘটেছে।

বিবৃতিতে আটক অভিবাসীদের অবিলম্বে মুক্তি ও আইন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়। সেইসঙ্গে অপরাধের সাথে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি, সরকারি কর্মকর্তা যারা ছাড়পত্র দিয়েছেন ও যারা ভিয়েতনামে অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন এবং প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- সিরাজুল ইসলাম (ইমেরিটাস অধ্যাপক), ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি), আনু মুহাম্মদ (শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), শাহদীন মালিক (আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ), আলী রীয়াজ (অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র), সি আর আবরার (অধ্যাপক (অব.), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), সারা হোসেন (আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী এবং পরিবেশ অধিকারকর্মী), শহিদুল আলম (আলোকচিত্রী), বদিউল মজুমদার (সংগঠক, সুজন), জ্যোতির্ময় বড়ুয়া (অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট),  ইফতেখারুজ্জামান (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

CAAB, Biman propose fee cuts to boost air cargo

The Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB) and Biman have proposed reducing landing, parking, and ground handling charges at the country’s airports to make air cargo services cost-effective and resilient amid global disruptions.

7h ago