১৪ রোহিঙ্গা সংগঠনের খোলা চিঠি

মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি

rohingya_camp-1_2.jpg
কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য। এএফপি ফাইল ছবি

আগামী ৮ নভেম্বর মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ সব রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতৃত্বাধীন ১৪টি মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের (ইউইসি) উদ্দেশ্যে দেওয়া একটি খোলা চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়।

আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে ইউইসি সম্প্রতি কমপক্ষে পাঁচ জন রোহিঙ্গাকে বাদ দিয়েছে। প্রার্থীদের জন্মের সময় তাদের বাবা-মা মিয়ানমারের নাগরিক ছিলেন না জানিয়ে কমিশন চার জনকে অযোগ্য ঘোষণা করে।

এ বছরের ২ জুলাই ইউইসি ঘোষণা করেছিল যে, বিদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকরা এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। ২০১০ ও ২০১৫ সালের নির্বাচনেও দেশের বাইরে অবস্থানরতদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল দেশটির সরকার।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বের যেকোনো জায়গার শরণার্থীরা অনুপস্থিত ব্যালটে শরণার্থী শিবিরে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করে নিজ দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।

ভোটাধিকারের দাবি জানানো ১৪টি মানবাধিকার সংস্থা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত আট লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গার পক্ষ থেকে এই খোলা চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে রোহিঙ্গা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক, রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক, রোহিঙ্গা ইয়ুথ ফর লিগ্যাল অ্যাকশন, ভয়েস অব রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংস্থারা নির্বাচনে রোহিঙ্গা প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত তুলে নিতে ইউইসির চেয়ারম্যান হ্লা থিন ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের নারীদের জন্য কাজ করা সংস্থা রোহিঙ্গা উইমেন এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ’র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শমীমা বিবি বলেন, ‘সব রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার থাকা উচিত। ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের নির্বাচনে আমাদের ভোটাধিকার ছিল।’

‘মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও পরিচয় নিয়ে আগের মতো করেই আমাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া উচিত’, যোগ করেন তিনি।

রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ’র সদস্য সৈয়দুল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের নির্বাচনে আমার অংশ নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। আমি আমার দেশকে বৈষম্যহীন দেখতে চাই।’

ফর্টিফাই রাইটস জানায়, মিয়ানমার সরকারের কাছে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কিত একাধিক নথিপত্র আছে। তাদের কাছে ১৯৯০ এর খানা তালিকা আছে, ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি), জাতীয়তা নিবন্ধন কার্ড, হোয়াইট কার্ড, হোয়াইট কার্ডের প্রাপ্তি রশিদ এবং আগেকার সরকার ও জাতিসংঘের দেওয়া পরিচয়পত্র আছে।

সংস্থাটি জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় মিয়ানমার সরকার ও বাংলাদেশে মিয়ানমার দূতাবাস এসব কাগজপত্র যাচাই করে রোহিঙ্গা ভোটারদেরকে নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।

এই ১৪ সংস্থার মতো করেই গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাইকমিশন নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকারের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান’ জানিয়েছিল।

মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবার পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ফর্টিফাই রাইটস।

সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক ইসমাইল ওল্ফ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার ও ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থাকা উচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের নৈতিক অবস্থানকে পুনর্জীবিত করে শরণার্থীদের ভোটাধিকারের আহ্বান জানানো।’

‘এবং এটি সম্ভব’ বলেও যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

3 killed in Iranian missile strike on southern Israel, says MDA

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

2d ago