পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও দাম দ্বিগুণ

Onion.jpg
নোয়াখালীর চৌমুহনীর আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ছবি: স্টার

নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীদের গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও দিন দিন পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। পেঁয়াজের ঝাঁজে দিশেহারা স্থানীয় ক্রেতা সাধারণ।

গত ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দিগুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ৪২-৪৫ টাকা, খুচরা মূল্য ৪৮-৫০ টাকা। পেঁয়াজের বাড়তি দামের জন্য আমদানিকারক সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পাইকারি বাজার ও আড়তগুলোতে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার দাবি করেছেন ভোক্তারা।

আজ রোববার দুপুরে বৃহত্তর নোয়াখালীর (নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলা) পাইকারি বাজার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

চৌমুহনী বাজারে পাইকারি-খুচরা তিন হাজারেরও বেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। চৌমুহনী পাইকারি বাজারের কালীতলা রোডের ব্যবসায়ী মেসার্স রাম মোহন সাহা’র সত্ত্বাধিকারী স্বপন সাহা জানান, তিনি প্রতি মাসে ১৪-১৫ হাজার বস্তা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। গত ১০ দিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল ২২-২৫ টাকা, কিন্তু গত ৫-৬ দিন যাবত হঠাৎ করে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চৌমুহনীর বণিক পট্টির পেয়াজ, রসুন, মরিচ, ও হলুদের পাইকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স অরবিন্দ সাহা’র সত্ত্বাধিকারী বাবুল সাহা জানান, তিনি গত ২৫-২৬ বছর ধরে এ শহরে ব্যবসা করে আসছেন। তার ব্যবসায়িক জীবনে চলতি বছর মার্চ-এপ্রিলের দিকে এবং গত ২৫ আগস্ট থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এজন্য তিনি স্থলবন্দর ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন।

তিনি জানান, স্থলবন্দর হিলি, ভোমরা ও সোনামসজিদ এলাকার আমদানিকারকদের কাছ থেকে ট্রাকযোগে পেঁয়াজ চৌমুহনীতে এনে বিক্রি করেন তিনিসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। তার প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১২০০ থেকে ১৫০০ মণ পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের ২৫ তারিখেও পেঁয়াজের দাম ছিল ২২-২৪ টাকা। ২৬ আগস্ট থেকে হঠাৎ করে আমদানিকারকরা পাইকারি মূল্যে কেজি প্রতি ২-৩ টাকা করে দাম বৃদ্ধি শুরু করে। এটা বাড়তে বাড়তে গত ৬-৭ দিন ধরে বেড়ে প্রতি কেজির মূল্য ৪৫ টাকায় পৌঁছে। কোথাও কোথাও আরও বেশী দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।’

পেঁয়াজের দাম বাড়ার ব্যাপারে পেঁয়াজের আড়ৎদার দিলিপ সাহা, বাবুল সাহা, স্বপন সাহা, অপু সাহা, অরবিন্দু সাহা ও মো. বাবুল মিয়া জানান, চলতি আগস্টের বন্যায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ কারণেই ভারতের রপ্তানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি কমিয়ে দেওয়ার ফলে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে।

চৌমুহনী বাজারের মুদি দোকানি মেসার্স মনোয়ারা ট্রেডার্স’র সত্ত্বাধিকারী জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘চৌমুহনী বাজারের পাইকারি আড়তগুলোতে হাজার হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। পাইকারি ব্যবসায়ী ও সীমান্তবর্তী এলাকার পেঁয়াজ আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্যে ২০-২৫ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।’

এদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ক্রেতা কবির হোসেন, ইউনুছ আলী, মো. ইয়াছিন, রোকসানা আক্তার জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের চোখে ধুলো দিয়ে এবং প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের স্বার্থে অবিলম্বে পেঁয়াজ বাজারে জেলা প্রশাসনের অভিযান দাবি করেন তারা।

চৌমুহনী বাজার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চৌমুহনীতে পেঁয়াজের কোনো আমদানিকারক নেই। যারা আছেন তারা সবাই আড়তদার। স্থলবন্দরগুলোতে যারা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন, তাদের কাছ থেকে চৌমুহনীর ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে আড়তে এনে বিক্রি করেন। আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে আড়ৎদারদেরকে পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দেন। যার প্রভাব পড়ে স্থানীয় পাইকারি বাজার চৌমুহনীতে।’ 

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুন নাহার বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম সারাদেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতেও একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে বাড়তি মূল্যে চৌমুহনীতে পেঁয়াজ বিক্রি হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে পেঁয়াজ রয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে কেউ কারসাজি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুব শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago