‘দীর্ঘদিন ধরেই মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেতো’

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল এবং এ বিষয়ে মসজিদ কমিটিকে জানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে কমিটির পক্ষ থেকে তিতাসকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল দাবি করা হলেও তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি মসজিদ কমিটি।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম আজ সোমবার বলেন, ‘গ্যাস বের হচ্ছে এ বিষয়ে মসজিদ কমিটি আমাদের জানায়নি। জানালে অবশ্যই এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। এ ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির গাফিলতি আছে।’

কমিটির গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীও। বাইতুস সালাত জামে মসজিদের পেছনে মুদি দোকানদার বজলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেতো। বিশেষ করে নামাজ পড়ার সময় সেজদা দিলে ভালোভাবে পাওয়া যেতো। এজন্য আমরা প্রায় সময় কমিটির লোকজনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারাই এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। এখন বলছে সেক্রেটারি তিতাসকে জানিয়েছে কিন্তু কোন কাগজ নাই। এখানে শুধু তিতাসের দোষ না, কমিটিরও দোষ আছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন বলেন, ‘গ্যাস বের হয় এটা কমিটিকে বহুবার বলা হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা গত ৯ মাস ধরে। প্রথমে শুধু মসজিদের গেইটের সামনেই গন্ধ পাওয়া যেত। আর বৃষ্টি হলে বুদবুদ উঠতো। তখন থেকেই বলা হচ্ছে কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। গত দুই মাস এখানে পানি জমে ছিল। সবাই মসজিদের দোতলায় নামাজ পড়তো। যার জন্য এতো দিন কেউ কিছু বলেনি।’

এলাকাবাসী জানান, ‘৮ শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত মসজিদে ভেতরের দিকে ৯টি সারিতে ৯৯ জন মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। আর বাইরে বারান্দার জায়গাটিতে চারটি সারিতে ৩২ জন নামাজ পড়তে পারেন। শুক্রবার জুম্মার নামাজে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত মুসল্লি হয়।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে মসজিদ প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এখন বেঁচে নেই। তাদের পরের যে লোকজন কমিটিতে ছিলেন তাদের মধ্যেও একমাত্র কোষাধ্যক্ষ সফি উদ্দিন খান জীবিত আছেন। ২০১৪ সালে নতুন কমিটির সভাপতি হন আব্দুল গফফুর ও সেক্রেটারী হান্নান সাউদ। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন নতুন কমিটি হয়নি।

মসজিদের পেছনের বাসায় ভাড়া থাকেন আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘মসজিদের যখন যা উন্নয়ন হয়েছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে করা হয়েছে। আজকে তাদের গাফিলতির কারণে এতোগুলো মানুষ মারা গেল।’

আরেক মুদি দোকানদার বলেন, ‘উপদেষ্টাসহ ৫১ সদস্যের মসজিদ কমিটি হলেও কাজ করেন সেক্রেটারি মো. হান্নান সাউদ। এসব নিয়ে সেক্রেটারি ও সভাপতির মধ্যে মনোমালিন্য আছে। যার জন্য দুই মাস মসজিদে আসেন না সভাপতি। কারণ প্রায় ৬ বছর ধরে নতুন কোন কমিটি হয় না।’

বাইতুস সালাত জামে মসজিদ কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন বলেন, ‘আমরা কমিটির সদস্য হলেও মসজিদের বড় বড় সব উন্নয়ন করেন সভাপতি-সেক্রেটারি। অনেক সময় এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয় না। মসজিদের ফান্ডও তারাই দেখাশোনা করেন। এখন যখন দুর্ঘটনা ঘটছে তখনই আমরা জানতে পারছি যে সেক্রেটারি তিতাসকে গ্যাসের বিষয়ে জানিয়েছেন। তার আগে আমাদের সঙ্গে কোন কথা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ফান্ড ছিল না তাই কাউকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি। আর গ্যাস থেকে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এটাও কেউ আশঙ্কা করেনি। অবহেলা করে সবাই এটা কাটিয়ে দেয়।’

বাইতুস সালাত জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফফুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সেক্রেটারি নিজেই উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধান করে থাকে। আমরাই ওনাকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি। যার জন্য উনিই তিতাসের সঙ্গে কথা বলে। তবে লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। আর তিনিই জানান তিতাস গ্যাস লাইন মেরামতের খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।’

তিনি দাবি করেন, ‘তিতাসের অবহেলার জন্যই এই দুর্ঘটনা।’

তিতাসের নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলামের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কার কাছে বলেছে, কে টাকা চেয়েছে আমরা জানি না। যে টাকা চেয়েছে তার নাম আমাদের জানান তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

 

Comments

The Daily Star  | English

At least 204 bodies recovered from plane crash site: police

It’s the first Dreamliner crash since its 2011 commercial debut, says Aviation Safety Network

4h ago