শীর্ষ খবর

দৃকের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলার নিন্দা, ৬০ নাগরিকের বিবৃতি

বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সংগঠন দৃকের শান্তিপূর্ণ প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৬০ জন প্রতিনিধি।
বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গত ৪ সেপ্টেম্বর হওয়া দৃকের প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছবি: আনিসুর রহমান

বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সংগঠন দৃকের শান্তিপূর্ণ প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৬০ জন প্রতিনিধি।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, যেভাবে সরকারি দলের কর্মীদের লেলিয়ে দিয়ে কর্মসূচি বানচাল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানাই।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন-সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি), আনু মুহাম্মদ (শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), আলী রীয়াজ (অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র), শাহীন আনাম (প্রধান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন), ইফতেখারুজ্জামান (নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ), বদিউল মজুমদার (সংগঠক এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সুজন), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী এবং পরিবেশ অধিকারকর্মী), খুশি কবীর (মানবাধিকার কর্মী), সারা হোসেন (আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট) প্রমূখ।

নাগরিকদের পক্ষে গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিনের পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর দৃকের ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচি যখন চলছিল তখন আজিমপুর, নীলক্ষেত ও লালবাগের (একাংশ) নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের দাবিতে শ্লোগান তুলতে তুলতে শখানেক কর্মী সন্ত্রাসীদের মতো করে চলমান প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচির স্থানে ঢুকে পড়ে এবং অধিকার কর্মী-শিল্পীদের চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে। এসময় কাউন্সিলর মানিক আয়োজক অধিকার কর্মী-শিল্পীদের বলেন যে “আগে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার হতে হবে। তার আগ পর্যন্ত অন্য কোন কিছুর বিচার হওয়া চলবে না”।

বিবৃতিদাতারা বলেন, দৃকের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের পাতা থেকে পুরো কর্মসূচি লাইভ করা হয়েছিল এবং আমরা সেখানে এসব দেখতে পেয়েছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, কাউন্সিলর মানিকের নেতৃত্বে সরকার দলীয় লোকেরা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে, প্রদর্শনীর ছবি কেড়ে নেয়, মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অবাঞ্ছিত স্লোগান দেয়, এমনকি দৃকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যানারের পেছনে নিজেদের আনা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা চারদিক থেকে ঘেরাও অবস্থায় এতকিছুর মধ্যেও প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকলে একপর্যায়ে তাদের মাইকও কেড়ে নেয়া হয়। এই পুরো আক্রমণ প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং এই শান্তিপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর ওপর আক্রমণে তারা ছিলেন নীরব দর্শক।’

এসময় হামলাকারীরা বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ মিছিলের পেছনে মারমুখী ঢঙে মিছিল করে আসতে থাকে। এসময়, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মিছিলকারীদের কয়েকজনের গায়ের উপর মোটরসাইকেল উঠানোর চেষ্টাও চালানো হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দৃকের এই কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় বিকাল ৪টায়। কিন্তু সেখানে হঠাৎ করে দুপুর ২টা থেকে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের দাবিতে শত শত সরকার দলীয় লোকের কর্মসূচি শুরু হয়। তারা এবং কয়েকশত পুলিশ মিলে পুরো শাহবাগ অঞ্চল দখল করে রাখে। এমতাবস্থায় দৃকের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির স্থান বদল করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিল্পীরা যখন কর্মসূচৱিরর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনো দফায় দফায় নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হন, তাদের ভয় দেখানো হয়।

পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মানিক মূলত রাষ্ট্রের জনগণের কর্মচারী, কিন্তু জনগণের কর্মচারী হয়ে তিনি কী করে বললেন “২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া ও অন্য বিচার চাওয়া যাবে না”-এটাই কি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারের এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদেরও অবস্থান? আমরা জানতে চাই।

বিবৃতিদাতারা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে করা শান্তিপূর্ণ শৈল্পিক প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে, যেভাবে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যবহার করা হলো, তাতে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিও চরম অসম্মান এবং অবমাননা প্রদর্শন সরকার দলীয় সদস্যরা নিজেরাই করলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Agency exists only in name

In December 2018, when the Digital Security Agency was formed under the Digital Security Act, it was hoped that the cybersecurity of important government sites with critical citizen data such as the Election Commission’s national identity database and the Office of the Registrar of Birth and Death  would be robust.

10h ago