ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে ২২.৫ কোটি টাকা লোপাট

ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) থেকে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন এক ব্যবসায়ী।
ACC_Logo.jpg
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) | ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) থেকে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন এক ব্যবসায়ী।

ঢাকা ট্রেডিংয়ের মালিক টিপু সুলতান ঋণ আবেদনের নথিতে ভুয়া তথ্য দিয়েছেন, এমনকি তার বাবার নামও পরিবর্তন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এসব তথ্য।

টিপু সুলতান, সাবেক বিডিবিএলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরি, সহকারী মহাব্যবস্থাপক দেওয়ান মোহাম্মদ ইশাক এবং প্রিন্সিপাল অফিসার দীনেশ চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে সাড়ে ২৫ কোটি টাকা অসদুপায়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে গত বছর ১১ জুন একটি মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে এবং টিপু সুলতান জামিনে রয়েছেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টিপু সুলতান এবং জনতা ব্যাংক লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপকসহ চার জনের নামে ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে আড়াইশ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করে দুদক।

ঢাকা ট্রেডিংয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি খুলনায় অবস্থিত এবং পাট রপ্তানিকারক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিবিএলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা ট্রেডিংয়ের ট্রাস্ট রিসিপ্ট (এলটিআর) অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি লোন অ্যাকাউন্ট খোলেন টিপু সুলতান।

এলটিআর অ্যাকাউন্টের বিপরীতে হালনাগাদ আয়কর সনদ নেওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা তা নেননি।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (টিপু) ব্যাংকের নো ইয়োর ক্লায়েন্ট (কেওয়াইসি) ফর্মটিতে তার বাবার নাম পরিবর্তন করেছেন।’

ঋণের আবেদনে টিপু জানিয়েছিলেন, খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তার প্রতিষ্ঠান ১২০ কোটি ৫০ লাখ টাকার গম সরবরাহ করার কার্যাদেশ পেয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা আরও জানান, বিডিবিএলের সঙ্গে এলটিআর অ্যাকাউন্ট খোলার পরে তিনি ব্যাংকে অবহিত করেন যে ‘একদিনের মধ্যে একটি ট্রাক’ যোগে ১৫ টন গম খাদ্য অধিদপ্তরে সরবরাহ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘একদিনের মধ্যে একটি ট্রাকের মাধ্যমে ১৫ হাজার টন গম পরিবহন করা অসম্ভব। তারপরও ব্যাংক কর্মকর্তারা ঢাকা ট্রেডিংয়ের জন্য সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছেন।’

ঢাকা ট্রেডিংয়ের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা আর্থিক রেকর্ড পরীক্ষা না করেই বিডিবিএল কর্মকর্তারা তাড়াহুড়ো করে ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এই ঋণ অনুমোদন করেছেন। অনুমোদিত এই ঋণ অংকের মধ্যে টিপু সুলতানের নামে বিতরণ হয়েছে সাড়ে ২২ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি নিরীক্ষা সংস্থা নিয়োগ করা হলে তারা দেখতে পান যে খাদ্য অধিদপ্তরের টেন্ডার ও গম সরবরাহ সম্পর্কিত যাবতীয় নথি ছিল ভুয়া। যে ট্রাকে গম পরিবহন করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে, সেটির নিবন্ধন নম্বরও ভুয়া ছিল।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ঢাকা ট্রেডিংকে এ জাতীয় কোনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি, যোগ করেন বিডিবিএল কর্মকর্তা।

যোগাযোগ করা হলে, দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বলেন, ‘তদন্ত এখনও চলছে।’

এর বেশি আর কোনো মন্তব্য তিনি করতে পারবেন না বলে জানান।

টিপু সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago