মালান: মাত্র ১৬ টি-টোয়েন্টি খেলেই চূড়ায়
ইংল্যান্ডের জার্সিতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সাকুল্যে ১৬টি। এই সংস্করণে তার ক্যারিয়ারের বয়স সবে তিন পেরিয়ে চারে রেখেছে পা। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে এরই মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছেন ডেভিড মালান।
বুধবার সবশেষ প্রকাশিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠেছেন এই বাঁহাতি ইংলিশ ব্যাটসম্যান। তার রেটিং পয়েন্ট ৮৭৭। ৩৩ বছর বয়সী তারকা এগিয়েছেন চার ধাপ।
৪৮.৭১ গড় আর ১৪৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে এখন পর্যন্ত ৬৮২ রান করেছেন মালান। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি সাতটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তার নামের পাশে। ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ২০১৯ সালে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে।
শুরুর গল্প:
২০০৬ সালে ২০ বছর বয়সে মিডলসেক্সে যোগ দিয়েছিলেন মালান। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের জন্য ততদিনে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অঙ্গনে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সের অন্যতম প্রধান পারফরমারে পরিণত হন তিনি। ইয়র্কশায়ারে নাম লেখানোর আগে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একই দলের হয়ে খেলেন মালান। ২০১৮ সালে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে দলটির অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ঘরোয়া টোয়েন্টি টোয়েন্টি কাপ প্রতিযোগিতায় মিডলসেক্সের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১২৭ ম্যাচে করেছেন ৩ হাজার ২২৭ রান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ:
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পান মালান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল তার। সেদিন মাত্র ৪৪ বলে ৭৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ইংল্যান্ডের হয়ে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
দারুণ শুরুর পরও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তারকাখচিত ইংল্যান্ড দলে মালান ঠাঁই পেয়েছেন বিক্ষিপ্তভাবে। তবে সুযোগ পাওয়া অধিকাংশ ম্যাচেই নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে ট্রান্স-তাসমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল মালানকে। ইংল্যান্ডের পাশপাশি সেখানে অংশ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। প্রতিযোগিতাটিতে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন মালান। তিনি চার ম্যাচে তিনটি ফিফটিসহ ৪৩ গড়ে করেছিলেন ১৭২ রান। ইংল্যান্ডের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ওই ত্রিদেশীয় সিরিজে ১০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও জাতীয় দলের হয়ে পরবর্তী টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দেড় বছর।
২০১৯ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ঢুকে ফের নজর কাড়েন মালান। টি-টোয়েন্টি সিরিজের চার ম্যাচে ২০৮ রান করেছিলেন তিনি। নিজ দলের ওয়েন মরগ্যানকে টপকে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
চতুর্থ ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন মালান। তার শতরান এসেছিল মাত্র ৪৮ বলে। এই সংস্করণে যা ইংল্যান্ডের পক্ষে দ্রুততম। তার অপরাজিত ১০৩ রানের কল্যাণে ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে ২৪১ রান জমা করেছিল স্কোরবোর্ডে। এটি তাদের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি স্কোর।
২০২০ সালের পারফরম্যান্স:
চলতি বছর সাতটি টি-টোয়েন্টি খেলে ২২৪ রান করেছেন মালান। হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন দুবার। গেল মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তিনি ধারাবাহিক ছিলেন এবং সেই ছন্দ ধরে রেখে চলতি মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরও দুর্দান্ত নৈপুণ্য উপহার দেন। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে সিরিজের সর্বোচ্চ ১২৯ রান।
গেল বছরের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করার পর আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে পুনরায় প্রবেশ করেন মালান। এক লাফে দখল করেন তৃতীয় স্থান। সেই থেকে র্যাঙ্কিংয়ে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন তিনি। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার পরপরই তিনি পৌঁছে গেছেন এক নম্বরে। পাকিস্তানের বাবর আজমকে ঠেলে দিয়েছেন দুইয়ে।
বিস্ময়কর ধারাবাহিকতা আর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সম্মিলনে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পারফরমার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মালান। সেই সঙ্গে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার দাবিও প্রতিনিয়ত জানিয়ে রাখছেন তিনি।
Comments