চা-শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার এখনই সময়
মৌলভীবাজার জেলার দলই চা-বাগানের শ্রমিক রতন সাধু (৫৬) দৈনিক নগদ মজুরি পান ১০২ টাকা। এই মজুরি থেকেই কেটে রাখা হয় প্রভিডেন্ট ফান্ডে শ্রমিকের প্রদেয় অংশ, ধর্মীয় ফান্ড এবং ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য-চাঁদা। রতন দৈনিক নগদ মজুরির সঙ্গে আরও যা পান, তার মধ্যে অন্যতম পাঁচ কেজি চাল বা আটা (সাড়ে তিন কেজি তার নিজের জন্য এবং দুই কেজি স্ত্রীর জন্য)। ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি চাল বা আটার জন্য তাকে অর্থ ব্যয় করতে হয়। নিবন্ধিত শ্রমিক হওয়ায় তিনি বছরে ৪ হাজার ৫৯০ টাকার দুটি বাৎসরিক বোনাসও পান। অন্যান্য চা-শ্রমিকের মতো তিনিও লেবার লাইনে বসবাস করেন এবং সেখানে তাকে ঘরভাড়া দিতে হয় না। এসবের পাশাপাশি তিনি আরও পান বিনা মূল্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা। রতন ও তার স্ত্রীর দুটি কন্যা সন্তান। একজনের বয়স ১৭, আরেকজনের ১৪। তাদের সন্তানেরা রেশন পায় না। কারণ রেশন সুবিধা পায় নিবন্ধিত শ্রমিকের দুই জন নির্ভরশীল সন্তান, যাদের বয়স ১২ বছরের কম।
নগদ মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে রতন সাধুর মাসিক আয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২০২ টাকায়। এ হিসাব ঘর ভাড়া ও স্বাস্থ্যসেবা খরচ বাদ দিয়ে। কিন্তু, বাগান মালিকেরা চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ও শ্রমিককে দেওয়া সুবিধার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে। শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ডের দেওয়া অংশ এবং চা-পাতা তোলার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণ যেমন: পাতি গামছা (৬০ ইঞ্চি লম্বা ও ৪০ ইঞ্চি চওড়া সুতি-গামছা) ও ছুপি (প্রখর রোদ ও বৃষ্টি থেকে মাথার সুরক্ষার জন্য হাতে তৈরি টুপি) ইত্যাদি বাবদ ছোটখাটো বিষয় খরচের তালিকা থেকে বাদ যায় না। আর এভাবেই ‘একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দাড়ায় ২৭০ টাকা’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সুতরাং মালিকদের সংগঠনের হিসাব অনুসারে, একজন শ্রমিকের মাসিক আয় আট হাজার ১০০ টাকা। যা সপ্তম গ্রেডের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরির সমান।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের (বিসিএসইউ) সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী মালিকপক্ষের এ হিসাব মানতে রাজি নন। ‘সব মিলিয়ে একজন শ্রমিক পান সর্বোচ্চ ১৭০ টাকার’, বলেন কৈরী। ‘একজন চা-শ্রমিক যা পায়, তা ন্যায্য মজুরির ধারেকাছেও না।’
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে চা-শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে এমন বিস্তারিত আলোচনা আমি কেন সামনে তুলে ধরছি, তা নিয়ে অনেকেই অবাক হতে পারেন। এক লাখ ২২ হাজার চা-শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরে স্বাধীন বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো গঠন করা হয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড। বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে দুই ধরনের পদ্ধতি আছে। এর একটি চা-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী বিসিএসইউ ও মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী বিটিএ’র মধ্যকার দর কষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে দুই বছর অন্তর দুই পক্ষের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিতে উপনীত হওয়া। অন্যটি হলো নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ঠিক করে দেওয়া মজুরি।
চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি জটিল বিষয়। শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি কখনোই তাদেরকে নগদ দেওয়া হয়নি, এমন তথ্যই মেলে চা-শ্রমিকদের মজুরির ইতিহাস অনুসন্ধান করলে। ১৮৮০ ও ১৮৯০ দশকের দিকে আসামে (আজকের সিলেট বিভাগ তখন আসামের অংশ ছিল) একজন চা-শ্রমিকের মাসিক গড় আয় ছিল ছয় রুপি। এ অর্থ দিয়ে তারা এক মাস চলার মতো পর্যাপ্ত চাল কিনতে পারত না। তখন এক মণ চালের মূল্য ছিল যেখানে দুই রুপি, সেখানে প্রতি মাসে এক মণ চাল কেনার জন্য শ্রমিকেরা খরচ করতে পারতেন মাত্র এক রুপি। ওই সময় ‘চালের মূল্য যখন চড়া হতো, তখন বাজার মূল্যের চাইতে কম মূল্যে চাল সরবরাহ এবং ন্যূনতম চিকিৎসা সুবিধা দিতে মালিকরা আইনগতভাবে বাধ্য ছিল’, জন গ্রিফিতস তার বই টি: দ্য ড্রিংক দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ডে এমনটিই লিখেছেন।
তখন থেকেই চা-শ্রমিকদেরকে অন্যান্য সুবিধা যেমন: আবাসন, শাক-সবজি চাষের জন্য একটু জমি, বিনা মূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে কাপড় দেওয়া ইত্যাদি চালু হয়। চা-শ্রমিকদের জন্য চাল কেনায় ভর্তুকি ১৮৫৬ সালের দুর্ভিক্ষে যখন উড়িষ্যা ও বিহারে ১৫ লাখ মানুষ মারা যায় এবং ১৯২০-২১ সালের মন্দার সময় চা-শ্রমিকদেরকে অনাহার থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। শ্রমিকদেরকে চা-বাগানে আটকে রাখতে বা মালিকদের ওপর নির্ভরশীল হতে এ ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হয়। আর এভাবেই ভর্তুকি ব্যবস্থা এবং মালিকদের ওপর চা-শ্রমিকদের নির্ভরশীলতা স্থায়ী রূপ নেয়।
বাংলাদেশের চা-বাগানগুলোতে শ্রমিকেরা যে নগদ মজুরি পাচ্ছেন, তা তাদের প্রকৃত মজুরির একটি অংশ। রেশনের চাল বা আটা দেওয়া হয় ভর্তুকি মূল্যে— বাজারমূল্য যাই হোক না কেন চা-শ্রমিকেরা এক কেজি চাল বা আটা কিনতে খরচ করে দুই টাকা। মালিকেরা স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাদের অংশ, উৎসব বোনাস এসব কিছুই হিসাব করে কড়ায়-গণ্ডায়। তবে, তারা শ্রম আইন অনুসারে লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার বিষয়ে সবসময়ই নীরব। তারা শ্রমিকদেরকে আইন মোতাবেক কখনোই গ্র্যাচুইটিও দেয়নি।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ) এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) আলোচনার মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের জন্য প্রথম নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয় ১৯৮২ সালে, যা বিসিএসইউ এবং বিটিএ কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করে। ২০০৯ সালে গঠিত দ্বিতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৮ সালের ৩২ দশমিক পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। সরকারি মধ্যস্থতা এবং বিসিএসইউ ও বিটিএ’র মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নগদ মজুরি বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন থেকে করা হয় ৬৯ টাকা। ২০১৫ সালের জুন থেকে এ শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৫ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৩ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮২ টাকা।
বিসিএসইউ ও বিটিএ’র মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট (যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয় এ শ্রেণির বাগানর জন্য ১০২ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১০০ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ৯৯ টাকা। এই চুক্তিতে মালিকরা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বেতনসহ সাপ্তাহিক ছুটি দেয় এবং শ্রম আইন অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি দিতে সম্মত হয়, যা শ্রমিকরা এখনো পায়নি।
বিসিএসইউ ও বিটিএ’র মধ্যে ২০১৯ সালেরে জানুয়ারি থেকে কার্যকর চুক্তি ঝুলে আছে। উভয় পক্ষই বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে। কিন্তু একমতে পৌছাঁতে পারেনি। এরই মধ্যে চা-শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য তৃতীয়বারের মতো নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আলোচনায় বিলম্ব ঘটলেও নিম্নতম মজুরি বোর্ড সম্ভবত শিগগিরই চা-শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করবে।
চা-শ্রমিকদের সামনে এখন বড় প্রশ্ন— তাদের ন্যূনতম নগদ মজুরি কত হবে? ছয় সদস্যের নিম্নতম মজুরি বোর্ডে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করছেন রামভজন কৈরী। তিনি দৈনিক নগদ মজুরি তিন শ টাকা দাবি করছেন। এটি বর্তমান দৈনিক নগদ মজুরি ১০২ টাকার তিন গুণ এবং কৈরী জানেন যে চা-বাগানের মালিকরা তার এ প্রস্তাবে কখনই রাজি হবেন না।
মালিক পক্ষের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং অন্য যারা তার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি যা বুঝছেন তা হলো— বিটিএ শ্রমিকের নগদ মজুরি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বাড়াতে আগ্রহী। ওই কর্মকর্তার যুক্তি, চায়ের দাম সম্প্রতি খুব কমে গেছে এবং তাদের লাভও কম। ‘যদি অবাস্তব মজুরি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আমরা চা-শ্রমিকদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি তা হ্রাস করার বিষয়ে বিবেচনা করব’, বলেন ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) মূল্যে কেজি প্রতি চাল কিনি ২৪ টাকায়। আর শ্রমিকের কাছে দুই টাকায় বিক্রি করি। ভর্তুকিতে খাবারসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে নগদ মজুরি আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকতে হবে।’
চা-শ্রমিকরা সবসময় দেখে বাগানের ম্যানেজার ও মালিকের বিলাসবহুল জীবন। কাজেই তৈরি চায়ের দাম একবছর পড়ে গেলেও মালিকরা বড় কোনো চাপে পড়েছে, এমনটা বিশ্বাস করেন না চা-শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) হিসাবে ২০১৯-২০২০ সালে এক কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিল ১৭৬ দশমিক ০৮ টাকা, যা ২০১৮-২০১৯ সালে ছিল ২৬২ দশমিক ৯৬ টাকা। গত পাঁচ বছরে এক কেজি চায়ের গড় মূল্য ২০৬ দশমিক ২৪ টাকা। মহামারির কারণে চায়ের দাম এক বছর হ্রাস পেলেও তা পরবর্তীতে আবার বাড়বে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয় হলো— মালিকরা কখনোই বাগানের নিরীক্ষা রিপোর্ট এবং লাভ-লোকসানের অঙ্ক বিসিএসইউ ও শ্রমিকদের কাছে প্রকাশ করে না। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের তিনটি বাগানের মালিক ব্র্যাক ব্যতিক্রম বলে মনে হয়। ব্র্যাক তার ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে তিন বাগান থেকে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা লাভের কথা প্রকাশ করেছে। যা আগের বছর থেকে ১১৪ শতাংশ বেশি।
ব্র্যাক প্রকাশিত তথ্য যে ইঙ্গিত দেয়, তা হলো— অন্য সব চা-বাগান বিসিএসইউ ও শ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য গোপন করছে। যা তাদের মজুরি নির্ধারণের জন্য আলোচনার সময় জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়টি দিবালোকের মতো স্পষ্ট, তা হলো— মজুরি বৈষম্যসহ বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনার কারণে চা জনগোষ্ঠীগুলোর মানুষ অন্যান্য নাগরিকদের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের ২০১৮ সালের এক জরিপের ফলাফল অনুসারে, চা-বাগানের ৭৪ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। অথচ ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার যেখানে ২৪ শতাংশ।
এমন অবস্থায় যে বিষয়টি একেবারেই ভুলে যাওয়া চলে না, তা হলো সমগ্র বিশ্বের চা-শিল্পে বাংলাদেশের চা-শ্রমিকরা সবচেয়ে কম মজুরি পান। তাদের গড় পারিবারিক আয় বাংলাদেশের জাতীয় বা গ্রামীণ দারিদ্র্যসীমা ও পারিবারিক আয়ের চেয়ে অনেক কম। আমাদের প্রতিবেশী দুই দেশ— শ্রীলঙ্কা ও ভারতে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক নগদ মজুরি যথাক্রমে পাঁচ ও দুই মার্কিন ডলারের বেশি। এর ওপর যোগ হয় আবাসন, শিশু যত্ন এবং বিনা মূলে স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য বাধ্যতামূলক ভাতা, যেমন: উপস্থিতি ভাতা ও বোনাস এবং ‘ওভার কিলো পেমেন্ট’ (দিনের কোটা পূরণের পরে কাঁচাপাতা তোলার জন্য প্রদত্ত মজুরি)।
২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার এক কেজি চা যখন ২ দশমিক ৯৯ ডলারে বিক্রি হয়, বিশ্ববাজারের তখন চায়ের দাম কেজি প্রতি ২ দশমিক ৫৯ ডলার এবং চট্টগ্রামে নিলামে তখন চায়ের দাম কেজিপ্রতি ২ দশমিক ৪১ ডলার। শ্রীলঙ্কার চা বিশ্ববাজারে সর্বাধিক দাম পাচ্ছে বটে, তারপরও বাংলাদেশের চায়ের গড় নিলাম মূল্য এত কম নয় যে এখানকার চা-শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি এমন দুঃখজনকভাবে কম হবে। শ্রীলঙ্কায় চা উৎপাদন ব্যয়ের ৬৩ শতাংশ খরচ হয় শ্রমিকের জন্য ও চার শতাংশ যায় কর্মচারী ও ব্যবস্থাপনা খাতে। বাংলাদেশে চা-শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের সময় দেখা উচিত চা-শ্রমিকের মজুরি উৎপাদন খরচের কতে শতাংশ।
সবশেষে বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশের চা-শ্রমিক যাদের বেশির ভাগ অবাঙালি এবং পাঁচ প্রজন্ম ধরে চা-বাগানের সঙ্গে বাঁধা পড়ে আছে, তাদের জীবনে মর্যাদাহীনতা চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ লেবার লাইনে অনেক পরিবার গবাদি পশু নিয়ে একই ঘরে রাত্রি যাপন করে। বাংলাদেশের সংবিধান সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ যত্নসহ নাগরিকদের ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণ’র নিশ্চয়তা দেয়। চা-বাগানের মালিক ও কর্তৃপক্ষ উভয়েরই চা-শ্রমিকদের চাহিদা পূরণের দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে মর্যাদা দিয়ে, সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সব পক্ষের লাভবান হবার দ্বার উন্মোচন করা উচিত। শক্তিশালী একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে শ্রীলঙ্কা আমাদের সামনে সেরা উদাহরণ।
ফিলিপ গাইন, গবেষক ও সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড) পরিচালক
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments