শেষ নাও ভাসানোর দিন!
১১ বছর আগের ঠিক এই দিনে শেষ নাও ভাসিয়েছিলেন ভাটির পুরুষ শাহ আব্দুল করিম। দিনটি ছিল ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। মাঝখানে কেটে গেছে ১১ বছর। বাংলার লোকায়ত গানের সর্বশেষ অধীশ্বর বলা হয় একুশে পদক প্রাপ্ত শাহ আব্দুল করিমকে। তারই অপূর্ব সুরের সৃষ্টি ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, ছাইড়া যাইবা যদি’।
‘গাড়ি চলে না চলে নারে’ গানে দেহ নামের গাড়ির কথাই বলেছিলেন তিনি। মৃত্যুর কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেছিলেন। নববর্ষের আয়োজন তার গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ কিংবা বসন্তকালে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’ গান দুটি শ্রোতাদের মনকে আলোড়িত করে।
শাহ আব্দুল করিম প্রায় দেড় হাজারের মতো গান রচনা করেছেন। তার মধ্যে সংগ্রহে আছে ছয়শ’র মতো গান। উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, প্রাণনাথ ছাড়িয়া যাইওনা মোরে, আগের বাহাদুরি এখন গেল কই, বন্ধে মায়া লাগাইছে, গাড়ি চলে না চলে না, আমার বন্ধুয়া বিহনে গো, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, বসন্ত বাতাসে সইগো, মাটির পিঞ্জিরার সোনা ময়না রে, কোন মেস্তরি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়, আইলা না আইলা নারে বন্ধু, মানুষ হয়ে তালাশ করলে মানুষ হওয়া যায়, সখি কুঞ্জ সাজাওগো, তুমি বিনে আকুল পরাণ, আমি তোমার কলের গাড়ি, তুমি হও ড্রাইভার, আমি কুলহারা কলঙ্কিনী, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, রঙের দুনিয়া তোরে চাই নাসহ অনেক গান।
শাহ আব্দুল করিম সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে এক কৃষক পরিবারে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। লালন ফকির, হাছন রাজা, রাধারমণ, শীতালং শাহ, আরকুম শাহ, দূরবীন শাহ, উকিল মুন্সী, শেখ বানুকে মনেপ্রাণে লালন করে গান করতেন তিনি।
তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা মোট সাতটি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— আফতাব সঙ্গীত (১৯৪৮), গণ সঙ্গীত (১৯৫৭), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০), ভাটির চিঠি (১৯৯৮), কালনীর কূলে (২০০১) ও শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র (২০০৯)।
Comments