ধানের দাম না বাড়লেও বাড়ছে চালের দাম

কুড়িগ্রামে ও লালমনিরহাটের হাটবাজারে ধানের দাম এক মাস আগে যা ছিল, এখনো তাই রয়েছে। তবে, দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। বাজার থেকে চাল কিনতে গিয়ে খেঠে খাওয়া শ্রমিক-দিনমজুর ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।
লালমনিরহাট সদরে ধান সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াকরণ করছেন এক নারী। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামে ও লালমনিরহাটের হাটবাজারে ধানের দাম একমাস আগে যা ছিল, এখনো তাই রয়েছে। তবে, দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। বাজার থেকে চাল কিনতে গিয়ে খেঠে খাওয়া শ্রমিক-দিনমজুর ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চাল ৪৪ থেকে ৫২ দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও বাজারে চালের দর ছিল ৪০ থেকে ৪৬ টাকা। চালের দাম আরও বাড়ার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

দুই জেলায় প্রায় ৯২০টি মিল চাতাল মালিকরা বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে চালের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চালের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা নিজের ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি করছেন।

কৃষকরা জানান, এক মাস আগে তারা প্রতি মণ ধান ৯২০ থেকে ৯৮০ টাকা বিক্রি করেছিলেন। আর এখনো ধানের বাজার একই রয়েছে। মিল চাতাল মালিকদের কাছে ধান নিয়ে গেলে তারা একই দামে ধান কিনছেন। বাজারে চালের দাম বেড়েছে এমন প্রশ্নে ধানের দাম বেশি চাইলে তারা জবাব দেন ‘না পোষালে ধান বাড়িতে নিয়ে যান’।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের কৃষক সফিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত ধান আছে। তাই তাদের চাল কিনতে হচ্ছে না। কিন্তু, অন্য পেশাজীবী মানুষকে চাল কিনতে হচ্ছে। মিল চাতাল মালিকরা পর্যাপ্ত ধান কিনে গুদামে মজুদ রেখেছেন। আর চাল উৎপন্ন করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ বছর আমরা ধান বিক্রি করে অপ্রত্যাশিতভাবে লাভবান হয়েছি সত্যি। কিন্তু, আমাদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন মিল চাতাল মালিকরা।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কুস্টারি গ্রামের বন্যাদুর্গত দিনমজুর সাদের আলী বলেন, ‘ঘরে চাল থাকলে লবণ দিয়ে মেখে ক্ষুধা মেটানো যায়। কিন্তু, চাল কিনতে গেলে মাথা ঘুরে যায় দামের জন্য। চালের দাম রাতারাতি বাড়ছে আর বাড়ছে। শাক সবজির দামও বেড়েছে অনেক। চালটা হলো আমাদের একান্ত প্রয়োজন। চাল কিনতে গিয়েই আমাদের রোজগারের প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান গ্রামের বন্যাদুর্গত রিকশাচালক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আয় বাড়েনি। বরং আগের চেয়ে আয় কমেছে। কিন্তু, সংসারে ব্যয় বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে চালের অধিক মূল্যই আমাদেরকে নাজেহাল করছে। রাত পোহালেই শুনি চালের দাম বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি উপজেলার আন্ধারিঝাড় এলাকার মিল চাতাল মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত ধান মজুদ আছে সত্যি, কিন্তু, বৃষ্টির কারণে এসব ধান থেকে চাল উৎপন্ন করা যাচ্ছে না। ‘আমরা খুব বেশি দাম নিচ্ছি না কিন্তু, চালের দাম পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা নিয়ন্ত্রণ করছে।’

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট এলাকায় মিল চাতাল মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে চালের দাম রাতারাতি বাড়ছে। এজন্য দায়ী পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা। মিল থেকে চালের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী সীমিত লাভে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।’

তবে, কুড়িগ্রাম শহরের পৌর বাজারের চালের পাইকারি বিক্রেতা আশরাফুল আলম বলেন, ‘মিল চাতাল মালিকদের কাছ থেকে আমরা উচ্চমূল্যে চাল কিনছি। তাই বাধ্য হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে উচ্চমূল্যে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের বাজার মিল চাতালের ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।’

চালের দাম রাতারাতি বেড়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে লালমনিরহাট জেলা মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো হলে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে গেলে চালের দাম কমবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago