যাহা মাঠের ফুটবল, তাহাই বাফুফে!

bff_cartoon_1
ছবি: স্টার

সামনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন। আপনি কি ভাবছেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে কোনো উন্মাদনা নেই? এমনটি ভেবে থাকলে কিন্তু খুব ভুল করছেন!

কেন জানেন তো? এবারের নির্বাচনের মাঠে কেবল একটি গোলপোস্ট থাকবে না, থাকবে দুটি। সেগুলোর কোনো একটির সামনে গোলরক্ষকের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকতে পারে। তবে কথা হলো, দুটি গোলপোস্ট থাকবে। আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

ফল নির্ধারণের জন্য দুটি গোলপোস্টের পাশপাশি কয়েক জন রেফারিও থাকবে… তো আমরা কীভাবে ভাবতে পারি যে, নির্বাচন নিয়ে কোনো উত্তেজনা নেই?

নিন্দুকরা অবশ্য অভিযোগ তুলতে পারে যে, এটা অনেকটা বাংলাদেশের ফুটবল মাঠের নিয়মিত দৃশ্যের মতো। দুটি দল নিয়মকানুন মেনে খেলতে নামে এবং খেলা শেষে একটা ফলও আসে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লড়াই হয় ফাঁকা গ্যালারির সামনে। কারণটা স্পষ্ট করে বলে না দিলেও আপনাদের তো জানাই আছে! খেলাটা আকর্ষণীয় হয় না।

তবে এই নিন্দুকরাই আবার যদি নির্বাচন নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের শোরগোল দেখতে চায়, তবে তারা চটজলদি বাফুফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটা ঢুঁ মেরে আসতে পারে।

যদিও লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সমর্থন জানাতে মাঠমুখী হতে দেখা যায় না ভক্তদের, তারপরও হাজার হাজার ‘ফুটবলপ্রেমী’ বাফুফের ফেসবুক পেজে নিজেদের মনের কথা জানাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। কী ভাবছেন? নাহ, কোনো ম্যাচ নিয়ে নয়, নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য ছুঁড়েছে তারা।

ধরুন, বাংলাদেশের ম্যাচ। হঠাৎ কোনো জাদুবলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ করে ফেলল ভক্তরা। কী ঘটত? একতরফা সমর্থনের দেখা মিলত গোটা মাঠে। বাফুফের ফেসবুক পেজের মন্তব্যগুলোও ঠিক তেমন একপেশে।

ভক্তদের সব রাগ, আবেগ ও ক্ষেত্রবিশেষে বিদ্রূপের লক্ষ্যবস্তু কেবল এক জন ব্যক্তি। ধারণা করুন তো কে? ঠিকই ধরেছেন। বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন ছাড়া আর কে!

বাফুফের কর্মকর্তারা চাইলে অবশ্য এই ঘটনাকে ইতিবাচকভাবেও বিশ্লেষণ করতে পারে। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এমন সাড়া সম্ভবত আগে কখনও পড়েনি। চাট্টিখানি কথা তো নয়! এক পোস্টের নিচেই ২৬ হাজার মন্তব্য। দিনটি ছিল ৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন।

ভক্তদের কণ্ঠে আকুলতা ছিল ফুটবলে পরিবর্তন আনার জন্য। কারণ তারা মনে করে, ফুটবলের সেই সুদিন পরিবর্তন ছাড়া ফিরে আসবে না। তারা ভালো ফুটবল দেখতে চায়। আর তারা বিশ্বাস করে, নতুন এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্বই সেই হারানো সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারে।

তাদের ভাবনা খুব পরিষ্কার। ‘অনেক’ হয়েছে। তাদের ভালোবাসার ফুটবলার অনেক সুযোগ পেয়েছেন এদেশের ফুটবলকে ঠিক পথে আর ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য।

তবে তারা যা নিয়ে কাঁদছে, তা নিয়ে তাদেরকে কাঁদতে দিন।

আমরা বাকিরা বরং চিন্তা করি নতুন উত্তেজনা ও আগ্রহ নিয়ে। ফুটবলকে ঘিরে তা-ও তো কিছুটা উত্তেজনার সঞ্চার হলো, সেটা কম কীসে?

এই ভিন্ন মতাবলম্বী সমর্থকদের ব্যাপারে বাফুফে কী করতে পারে? নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তির প্রতি তীব্র মোহ নিয়ে সমালোচনা করা ছাড়া?

অন্যদিকে, ফুটবল অনুরাগীরাই বা কী করতে পারে? তাদের সব রাগ, ক্ষোভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢেলে দেওয়া ছাড়া? আর গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুলেফেঁপে ওঠা বাফুফের দুষ্টচক্রকে সামান্য নাড়া দেওয়া ব্যতীত এই ২৬ হাজার মন্তব্যের আর কিছু করার কোনো সুযোগ আছে?

বাফুফে অবশ্য ভাবতেই পারে, তোমাদের কাজ তোমরা করো, আমরা আমাদের কাজ নিয়ে বেজায় খুশি। লিখে লিখে কাগজ ভরিয়ে ফেললেও আমাদের কিছু যায় আসে না। এটাই আমাদের চলার পদ্ধতি, ভাই!

চলুন, সবকিছু দূরে সরিয়ে রেখে মহান কথক মোল্লা নাসিরুদ্দিনের একটি গল্প থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক। তাতে হয়তো বিষয়টা একটু সহজ করে ভাবা যাবে।

‘এক রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্ধকারটা একটু বেশিই গাঢ় ছিল। মোল্লা নাসিরুদ্দিন অস্থিরতায় ঘুমাতে পারছিলেন না। হঠাৎ তিনি উঠে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন যে, বাগানের মধ্যে একটি সাদা প্রতিকৃতি নড়াচড়া করছে। চোর ভেবে মোল্লা দ্রুত তার তীর, ধনুক বের করেন এবং সন্তর্পণে চোরের হৃৎপিণ্ড বরাবর তীর মারেন। তীরটি লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত করেছে বুঝতে পেরে অনুপ্রবেশকারীর পরিচয় জানতে বাইরে বের হন মোল্লা। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পর হতভম্ব হয়ে দৌড়ে ঘরে ফিরে আসেন তিনি। স্বামীকে রক্তশূন্য ও ফ্যাকাশে চেহারায় দেখতে পেয়ে মোল্লার স্ত্রী কী ঘটেছে তা জানতে চান।

মোল্লা তখন বলেন, “আমি খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। এজন্য আমার ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এক মিনিট আগে বাগানে ঝোলানো আমার জামাটিকে ভুল করে চোর ভেবে তীর ছুঁড়েছিলাম। তীরটি এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। একবার ভেবে দেখো, জামার মধ্যে আমি থাকলে কী হতো! এতক্ষণে আমি মারা যেতাম!”’

গল্পটির শিক্ষা কিন্তু খুব সাধারণ। যা-ই ঘটুক না কেন, সেটার উজ্জ্বল দিকটাই দেখুন। 

তাহলে আমরা কিন্তু বলতে পারি, বাফুফে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছে!

ধরুন, কেউ একজন শেষ পর্যন্ত ওয়াকওভার পেল। সেটাও তো খেলারই একটা অংশ, তাই না?

তাছাড়া, আমরা তো ঘরোয়া ফুটবলে ‘পাতানো ম্যাচের’ কত কথাই শুনি। তাতে হয়েছেটা কী?

বাদ দিন। আমরা সবাই না হয় উজ্জ্বল দিকটার দিকেই তাকাই!

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque must be sworn in or larger movement may erupt: Salahuddin

"We have always cooperated with this government. But that doesn't mean we've handed you a blank cheque"

10m ago