হতাশায় প্রার্থীরা, দ্রুত ফলাফল চান

রূপালী ব্যাংকের এক নিয়োগ পরীক্ষাতেই ৪ বছর

চার বছরে একজন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করতে পারেন। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চার বছর বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ফলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আড়াই হাজারেরও বেশি প্রার্থী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

চার বছরে একজন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করতে পারেন। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চার বছর বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ফলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আড়াই হাজারেরও বেশি প্রার্থী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) গঠন করা হয়। আশা করা হয়েছিল, এতে ব্যাংকগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত ও স্বচ্ছ হবে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতায় আটকে পড়ে অনেক নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিশেষ করে বিএসসি গঠনের পর প্রথম দুই বছরে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো গতি পায়নি। অন্তত ৩০ লাখ আবেদনকারী তখন ঝুলে ছিল। এরপর গত দেড়-দুই বছরে নিয়োগ পরীক্ষাতে গতি আসলেও, রূপালী ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতার রেকর্ড গড়েছে।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির বিজ্ঞপ্তি এবং পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭৩৬টি পোস্টের বিপরীতে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৩ আগস্ট। ৬০ হাজার ২৪২ জন তাতে আবেদন করেন।

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ১১৯ জন। এরপর ২৬ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। লিখিত শেষে মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন দুই হাজার ৪৭৫ জন।

উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় ৫ জানুয়ারি। ১২ ফেব্রুয়ারি মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশ হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় ধরলে চার বছর এক মাস ১০ দিন সময় চলে গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একটি নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হতে কেন চার বছর লাগবে? বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফল প্রকাশে কোনোভাবেই সাত মাস লাগা উচিত নয়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘করোনার পর গত তিন মাস ধরে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। অথচ এই নিয়োগের ফল প্রকাশ হচ্ছে না। মার্চের মাঝামাঝি থেকে আমরা বিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলছে না। বারবার বলে এই সপ্তায় ফল, আরেক সপ্তায় শুনি বড় কর্তা নেই, আবার শুনি ঈদের পর। এভাবেই চলছে। সপ্তাহ আর শেষ হয় না।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা একজন ছাত্রী বলেন, ‘একটা চাকরি যে কত দরকার, সেই কষ্টটা কি নিয়োগকর্তারা বুঝতে পারেন না। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে যত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিল, সবগুলোর ফল হয়ে গেছে। কিন্তু রূপালী ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয় না। অথচ এরপরের অনেক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়ে গেছে। অনেকে চাকরিতে যোগদানও করেছে।’

পরীক্ষার্থীরা জানান, রূপালী ব্যাংকের পর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগের ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এমনকি উত্তীর্ণরা চাকরিতে যোগও দিয়েছেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও রূপালী ব্যাংকের অফিসার নিয়োগের ফলাফল হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব আরিফ হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মূলত মামলাজনিত কারণেই প্রথম তিন বছর পরীক্ষাটা নেওয়া যায়নি। এরপর গত বছরের শেষে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। ফেব্রুয়ারিতে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর করোনা চলে আসে। প্রথমে লকডাউন এবং পরে ফলাফল তৈরির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব কারণেই ফল দিতে দেরি হচ্ছে।’

পরে অনুষ্ঠিত কয়েকটি পরীক্ষার ফল দিয়ে দেওয়া হলো কীভাবে? জানতে জানতে চাইলে বিএসসির সদস্য সচিব আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের ফল আগে দেওয়া হয়েছে। কারণ অফিসার পদের ফল দিয়ে দিলে দেখা যেত, তাদের মধ্যে যারা সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা চলে যেতেন। এ কারণেই এই ফল আগে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রার্থীদের আর কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলব। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে।’

শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago