নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত বাংলাদেশি-মার্কিনি ডা. রুহুল আবিদ

নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি-মার্কিনি চিকিৎসক রুহুল আবিদ ও তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা)।
ডা. রুহুল আবিদ। ছবি: সংগৃহীত

নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি-মার্কিনি চিকিৎসক রুহুল আবিদ ও তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা)।

ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ডা. রুহুল আবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলপার্ট মেডিকেল স্কুলের একজন অধ্যাপক।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিন-ফিলিপ বেলিউ এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত ২১১ জনের মধ্যে একজন ডা. রুহুল আবিদ।

ডা. আবিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক ও জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোলিকুলার বায়োলজি ও জৈব রসায়নে পিএইচডি অর্জন করেছেন।

২০০১ সালে তিনি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ফেলোশিপ শেষ করেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের একজন নির্বাহী সদস্যও।

তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা) বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার পোশাক শ্রমিককে বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দিয়েছে। এছাড়াও সংস্থাটি প্রায় নয় হাজার সুবিধাবঞ্চিত নারী ও পোশাক শ্রমিকের জরায়ু ক্যানসার স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সেবা এবং কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।

বর্তমানে সংস্থাটি দুটি রোহিঙ্গা  ক্যাম্পে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দক্ষতা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধ্বসের পর ডা. আবিদ সারাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার তাগিদ থেকে ‘হায়েফা’ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ২০১৩ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডা. রোজমেরি দুদার সঙ্গে ঢাকা, গাজীপুর ও শ্রীপুরের তিনটি কারখানায় পোশাক শ্রমিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন।

প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, যক্ষ্মা ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার মতো দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা ও রোগের ঝুঁকির মধ্যে আছেন কিনা তা যাচাই করা হয়। এই রোগগুলোর উপর মনোযোগী হয়েই হায়েফা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

২০১৬ সালে হায়েফা নিয়ে আসে ডিজিটাল উদ্ভাবন ‘নিরোগ’। এটি একটি সৌর বিদ্যুৎ পরিচালিত, অফলাইনে ব্যবহার করা যায় এমন মোবাইল ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড (ইএমআর) সিস্টেম।

‘নিরোগ’ এর মাধ্যমে ডা. আবিদ ও তার দল দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন মানুষের চিকিত্সা রেকর্ড, রোগ বিশ্লেষণ ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন।

২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর থেকে হায়েফা ‘নিরোগ’ ব্যবহার করে আসছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা বারকোডসহ একটি ডিজিটাল হেলথ কার্ড সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য দুটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক পরিচালনা করছে হায়েফা।

কক্সবাজারের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও সরকারি কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য ও রোগীদের রোগের বিবরণী ব্যবহার করতে পারেন, যা রোগ নির্ণয় করতে সহায়তা করে এবং রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে।

আবিদের ক্লিনিকগুলো দীর্ঘমেয়াদী ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং সংক্রামক নয় এমন রোগ, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, অপুষ্টিজনিত জটিলতা ও জরায়ুর ক্যান্সারের চিকিত্সা দিয়ে থাকে।

১৯৮২ সাল থেকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার পর টেকসই স্বাস্থ্যসেবার অভাবে তাদের মধ্যে অপুষ্টি ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

গত ছয় মাস ধরে, ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে সম্ভাব্য রোগ মোকাবিলাসহ করোনা মহামারি ঠেকাতে কাজ করেছে হায়েফা।

২০২০ সালের এপ্রিলে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা প্রজেক্ট হোপের সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক কার্যক্রম শুরু করে হায়েফা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জুড়ে বড় বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি বিশ্বমানের চার দিনের কোভিড-১৯ দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডা. আবিদ ও হায়েফা ৩৫টি সংস্থার প্রায় এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করেছে।

২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে আরও তিন হাজার ৬০০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আশা জানিয়েছে হায়েফা।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. আবিদের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষায় পিপিইর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা করেছিল। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য ১০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক, পালস অক্সিমিটার ও হাঁপানির জন্য ইনহেলারের মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

ডা. আবিদ এবং তার সংস্থা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ২০১৮ সালে গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জস কানাডার ‘স্টারস ইন গ্লোবাল হেলথ’ পুরষ্কার পায়।

ডা. আবিদ তার প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের জন্য কোনো বেতন বা পারিতোষিক নেন না।

নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ২০২০ সালের পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্য থেকে আগামী অক্টোবরে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

(দ্য ডেইলি স্টারে এই আর্টিকেলটি লিখতে সহযোগিতা করেছেন পদ্য পারমিতা।)

Comments

The Daily Star  | English

No confrontations, no use of force, Quader warns independents

Awami League General Secretary Obaidul Quader today cautioned the AL leaders running as independents not to engage in confrontations with party nominees or use any force

1h ago